প্রচ্ছদ জাতীয় ভালো ও খারাপ ব্যাংক একীভূত হলে কী হয়? গ্রাহকদের কী হবে?

ভালো ও খারাপ ব্যাংক একীভূত হলে কী হয়? গ্রাহকদের কী হবে?

ব্যাংকিং খাতকে সংস্কারের উদ্দেশ্যে দেশের সব দুর্বল বা খারাপ ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সাথে একীভূত (মার্জার) করার পরামর্শ দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৬১টি ব্যাংক আছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এর মধ্যে ৪০টির মতো ব্যাংক ভালো করলেও বাকি ব্যাংকগুলোর অবস্থা সুবিধাজনক নয়।

ব্যাংকিং খাতে কোনও দুর্বল প্রতিষ্ঠান থাকলে পুরো খাতই ঝুঁকির মাঝে থাকে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ে।

খারাপ ব্যাংকগুলোকে ভালোগুলোর সাথে একীভূত করা গেলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

একীভূত করার প্রসঙ্গ এলেই কিছু প্রশ্ন সামনে উঠে আসে।

যেমন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “কোনও ব্যাংক যদি পিসিএ’র পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে না পারে, তখন মার্জারের মতো অপশনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকবে।”

এখন প্রশ্ন হলো, পিসিএ কী? কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ?

২০২৩ সালের পাঁচই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক’ শীর্ষক এক সার্কুলার দেয়। দুর্বল ব্যাংকগুলোর সংকট কাটিয়ে তোলার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এই ফ্রেমওয়ার্কটি তৈরি করা হয়েছিল।

এতে আরও উল্লেখ আছে যে ব্যাংকগুলো যদি পিসিএ বাস্তবায়ন করতে না পারে এবং দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়, তাহলে একীভূত করার মতো পদক্ষেপও নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

কবে একীভূত হবে?
“এটা এমন না যে কালকেই মার্জ হচ্ছে। এটা একটা ডিরেকশন। পিসিএ-তে যে সমস্ত কথাবার্তা বলেছে, সে অনুযায়ীই বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকেই আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে বলছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

সে সার্কুলারে বলা হয়, ২০২৫ সালের ৩১শে মার্চ থেকে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক কার্যকর করা হবে। অর্থাৎ, তখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখা শুরু করবে যে কোন ব্যাংক কী অবস্থায় আছে।

“পিসিএ ২০২৫ সালের মার্চে চালু হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে যে ২০২৫ সালের পর আমরা যখন দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করবো, তখন মার্জিং-এর দিকে যাবো”, বলেন মি. রহমান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ব্যাংকগুলোর প্রতি আমাদের নির্দেশনা হলো মার্চের আগেই পিসিএ’র পূর্ণ বাস্তবায়ন। তবে বাস্তবায়িত না হলেই যে মার্জ করা হবে, এমন না।”

“বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে এই অপশন ছাড়া আরও অপশন আছে। সব অপশনেই বাংলাদেশ ব্যাংক যেতে পারে। সেটাই কাল বলা হয়েছে”, যোগ করেন তিনি।

কাল বলতে তিনি গত ৩১শে জানুয়ারিতে ব্যাংকার্স সভায় দেয়া বক্তব্যকে বুঝিয়েছেন।

সেদিন দেশি-বিদেশি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আয়োজিত সভায় ভালো-খারাপ ব্যাংক একীভূত করার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

ব্যাংকার্স সভা শেষে সাংবাদিকদেরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মি. হক বলেছিলেন, ‘‘গভর্নর সব ব্যাংকারদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কোন কোন সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে।”

যাদের অবস্থা একেবারেই দুর্বল; তাদের ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণ, আমানত সংগ্রহ থেকে শুরু করে কার্যক্রমের ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে জানান তিনি।

“আবার কোনও কোনও ব্যাংককে একীভূত করেও দেওয়া হতে পারে”, উল্লেখ করে তিনি জানান, “তবে এর মাঝে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলে একীভূত করার সম্ভাবনা নেই”।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমার মনে হয় ২০২৬ সাল থেকে একীভূতকরণ আরম্ভ হয়ে যাবে। এরকম কোনও রেগুলেশন বের হয়নি। তবে মনে হচ্ছে, তাই হবে।”

সমস্যার সমাধান হবে?
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, খারাপ ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের সাথে একীভূত করা কিছুটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ব্যাংকিং খাতে কোনও দুর্বল প্রতিষ্ঠান থাকলে পুরো খাতই ঝুঁকির মাঝে থাকে। এই ঝুঁকি এড়ানোর একটা অপশন হলো মার্জার। তবে এটি কীভাবে হবে, তা আমরা এখনও জানি না।”

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিস এ খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দেশে ৬০টির বেশি ব্যাংক। অথচ, খুঁজলে ৬০টি ভালো সিইও পাওয়া যাবে না। তাহলে ব্যাংক তো দুর্বল হবেই। সেজন্যই দেশের ব্যাংকগুলোকে একত্রিত করার কথা আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি।”

তিনি বলেন, কোনও দুর্বল ব্যাংক যদি একটা ভালো ব্যাংকের সাথে একীভূত হয়, তাহলে দুই প্রতিষ্ঠানেরই লাভ হবে। কারণ দু’টো ব্যাংক এক হওয়ার পর সেটি আরও বড় ও শক্তিশালী হয়।

“আমি ভালো ব্যাংক। আমার সাথে একটা খারাপ ব্যাংক এলেই আমি খারাপ হয়ে যাচ্ছি না। বরং, ও এলে আমি ওর মূলধন পাচ্ছি। ওর আউটরিচ পাচ্ছি…অপারেটিং কস্ট কমবে। একটা মেশিনে চলবে, তাই সাশ্রয় হবে। একটা কার্ড সিস্টেম থাকবে। এরকম অনেক বিষয় আছে এখানে।”

ব্যাংকাররাও মনে করেন যে একটা ভালো ব্যাংক যদি খারাপ ব্যাংকের সাথে যুক্ত হয়, তাহলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব এবং তাতে করে দেশের পুরো ব্যাংকিং খাতে পরিবর্তন আসতে পারে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমি যা বুঝতে পারছি, বেশ কতগুলো ব্যাংকের অবস্থা ভালো না। সেগুলোকে রিফর্ম (সংস্কার) করা দরকার। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর এখন যে অবস্থায় আছে, এভাবে চলতে পারে না। এটা সিস্টেমের ইস্যু হয়ে যাচ্ছে এখন। দিনশেষে, ব্যাংক হলো ইকোনমির হার্ট। ইকোনমি রান না করলে দেশ চলবে কীভাবে?”

“খারাপ ব্যাংকের দুর্বল ব্যবস্থাপনা থাকতে পারে। হয়তো তার ওভারঅল সিস্টেম ভালো না। সেখানে একটা ভালো ব্যাংক গিয়ে তার দুর্বল জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করে ওভারঅল পার্ফরম্যান্স ইম্প্রুভ করতে পারে”, যোগ করেন মি. রহমান।

এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেনও বলেন, দু’টো ব্যাংক এক করলে ভালো কিছু হতে পারে।

“অন্যান্য দেশেও মার্জার একুইজেশন হয়েছে। এটা নতুন কিছু না। এটা একটা গন্তব্য। এখানে যেতে অন্তত দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে এবং এর জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকে।”

এই খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খারাপ ও ভালো ব্যাংক একীভূত করা হলে ডিপোজিটর অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে কোনও ভোগান্তি হওয়ার কথা না।

কারণ একটা ভালো ব্যাংক যখন একটা খারাপ ব্যাংকের দায়িত্ব নিবে, তখন তারা সবদিক বিবেচনা করবে।

মি. হোসেন এ বিষয়ে বলেন, “মার্জ মানে ওদের (খারাপ ব্যাংক) ব্যালেন্স শিট আর আপনার (ভাল ব্যাংক) ব্যালেন্স শিট এক হওয়া। তখন ভালো ব্যাংককে ডিপোজিটরদের দায়িত্বও নিতে হবে। তারা যদি বলে যে আমরা ডিপোজিটরদের টাকা দিবো না, তা তো হয় না।

“যে ব্যাংক দায়িত্ব নিচ্ছে, তারা যদি শক্তিশালী হয় এবং তাদের যদি ভালো গভর্নিং বডি থাকে, তাহলে গ্রাহক পর্যায়ে কোনও সমস্যা হবে না। ডিপোজিটরদের বিষয়টা নিশ্চিত করেই মার্জ করতে হবে।”

তবে এক্ষেত্রে দায়িত্ব নেয়ার আগে ভালো বা শক্তিশালী ব্যাংকগুলোকে ভাবার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, “দায়িত্ব নেয়ার আগে দেখতে হবে যে ডিপোজিটরদের এগেইনস্টে দুর্বল ব্যাংকের কেমন সম্পদ আছে। সম্ভবত কম থাকারই কথা। কারণ ডিপোজিটের থেকে সম্পদ কম বলেই ওরা দুর্বল। তাই, ভালো ব্যাংককে ওটা জেনেশুনেই নিতে হবে যে আমি যে ব্যাংকটিকে নিচ্ছি, তার ‘ডিপোজিট লায়াবিলিটি’ আছে।”

চাকরিচ্যুত হওয়ার শঙ্কা
দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করার ক্ষেত্রে বড় কোনও সমস্যা দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা।

তবে তারা এটা বলছেন যে একীভূত করা হলে অনেক মানুষ তাদের চাকরি হারাবে এবং তখন এটি একটি মানবিক ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে।

কারণ, কোনও ভালো ব্যাংক যখন খারাপ কোনও ব্যাংকের দায়িত্ব নিবে, তখন তারা স্বভাবতই কর্মী নিয়োগের বেলায় সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে চাইবে।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “ম্যানপাওয়ার নিয়ে একটা জটিলতা আছে এখানে। কারণ এখানে সবার আগে এটা বুঝতে হবে যে যারা নিচ্ছে, তারা এক্সিস্টিং স্টাফদের রাখার শর্তে নিচ্ছে, নাকি ব্যাংককে রিঅর্গানাইজ করার শর্তে নিচ্ছে।”

তবে সাধারণত পুরাতন কর্মীদেরকে রাখার শর্তে একীভূত হতে রাজি হয় না কোনও ব্যাংক। কারণ, একটি ব্যাংক এই ধরনের বিপদের মাঝে পড়ে তার কর্মীদের গাফেলতির জন্যই।

জাপানের এমইউএফজি ব্যাংক, যা ব্যাংক অফ টোকিও-মিটসুবিশি ইউএফজি নামেও পরিচিত। তিনটি ব্যাংককে একীভূত করার পর এটি এখন জাপানের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

“ব্যাংকের বিপদ মানে, তার এক্সিস্টিং স্টাফরা ব্যাংক ঠিকভাবে চালায় নাই। তাহলে পুরাতন কর্মীদের রাখার বাধ্যবাধকতার মাঝে কেন পড়বে ভালোরা? তাই, ঐ ফ্রিডমটা তারা চাইবেনই যে আই উইল পিক দ্য পার্সন। কারণ, প্রায় সব দুর্বল ব্যাংকগুলোতে দক্ষ ম্যানপাওয়ারের অভাব আছে”, ব্যাখ্যা করেন তিনি।

একীভূত করা হলে অনেক কর্মীর চাকরিচ্যুত হওয়ার শঙ্কা ছাড়া অন্য সমস্যা দেখেন না মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. খানও। “জটিলতা শুধু একটাই, চাকরি যাবে।”

কিন্তু তারপরও তিনি একীভূত করার পক্ষে। এমনকি শুধু প্রাইভেট ব্যাংক না, সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিৎ বলে মনে করেন এই সাবেক ব্যাংকার।

“একীভূতকরণ সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। এটা হোক। তাতে কী? এর আগে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা এবং বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক মিলে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হয়েছে। সেটা তো অনেক ভালোভাবে চলছে এখন”, বলেন তিনি।

“আমি মনে করি- সোনালি, জনতা, রূপালি এগুলোকেও একসাথে করে দিক। তখন এটি অনেক শক্তিশালী এবং বড় ব্যাংক হবে। এভাবে রেখে তো কোনও লাভ নেই। আর একত্রিত করার সময় যাদের চাকরি যাবে, তাদেরকে চলে যাওয়ার সময় টাকা-পয়সা দিয়ে দিবে।”

 

ভালো কেন খারাপের দায়িত্ব নিবে?
একীভূত করাকে শুধু অর্থনীতিবিদরাই ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। ব্যাংকাররাও এটিকে সুনজরে দেখছেন। কিন্তু সেইসাথে তারা এও ভাবছেন যে তারা কেন এই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

তারা এও বলছে, ভালো ব্যাংককে কোনও বাড়তি সুবিধা না দিলে তারা এতে আগ্রহী হবে না।

মি. রহমান বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক হয়তো বলবে, আমরা তোমাদের পলিসি সাপোর্ট দিবো। মানে, নিশ্চয়ই তারা কোনও না কোনও সুবিধা দিবে। নয়তো আমরা কেন যাবো? একীভূত করা নিয়ে ভালো ব্যাংকের অবজারভেশন আপাতত এটাই, হোয়াট ইজ দেয়ার ফর আস?”

যদি শেষ পর্যন্ত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হয়, তাহলে কোন প্রক্রিয়ার মাঝ দিয়ে এটা হবে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন দিবে সরকার।

“সরকার যখন বলেছে, আমরা সাপোর্ট দেবো। কিন্তু আমাদের দেখতে হবে যে কী সাপোর্ট দিবে। এটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। গাইডলাইন এলে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে।”

এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, পূর্ণাঙ্গ রেগুলেশন এলে বোঝা যাবে যে কোনো ব্যাংক কোন শর্তে একটা দুর্বল ব্যাংকের সাথে ‘মার্জ’ করবে।

“কোন ব্যাংক নিবে, কোন ব্যাংক নিবে না; কোনও ব্যাংক নিজ থেকে নিবে, নাকি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলবে; এই ব্যাপারে মন্তব্য করা সম্ভব না, যতক্ষণ পর্যন্ত পলিসি সামনে আসে। এখনও সবটা ধারণা। রেগুলেশন ২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬ সালের শুরুতে আসবে”, বলেন তিনি।

 

‘জোর করতে পারে না’
কোনও ব্যাংক একীভূত হবে নাকি হবে না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মি. হক এ প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকও করতে পারে। আবার কোনও ব্যাংক চাইলে নিজেও করতে পারে। ব্যাংক কোম্পানি আইনেই এই প্রভিশন দেয়া আছে।”

তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি যেকোনও ব্যাংক ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন-২০২৩’ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। সেক্ষেত্রে, একীভূত করার নিয়মও সবার জন্য প্রযোজ্য।

তবে কোনও ব্যাংককে একীভূত করার জন্য জোর করতে পারে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

“আইন অনুযায়ী, তারা আমাদের একীভূত করার জন্য জোর করতে পারে না। কিন্তু সেখানে আবার এটাও বলা আছে, জনহিতকর কাজে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবসময় আপনাকে বলতে পারে”, বলছিলেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. রহমান।

যদিও অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে ‘ফোর্স’ করতে পারে। কারণ দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করা হয়, যখন অন্য কোনও উপায় হাতে থাকে না আর।

“বাংলাদেশ ব্যাংক তাদেরকে বাধ্য করতে পারে। এমন তো না যে সরকার হুট করে একীভূত করার কথা বলছে। সে একটা ধারাবাহিকতা মেনে সবটা করছে। তাকে এর আগে সুযোগ দেয়া হয়েছে”, বলেন তিনি।

সাধারণত একীভূত করা মানে, ব্যাংকটিকে রক্ষা করার শেষ চেষ্টা। কোনও ব্যাংক যদি এতে রাজি না হয়, তাহলে তার শেষ পরিণতি হতে পারে বন্ধ হয়ে যাওয়া।

“মার্জ না করতে চাইলে ইমিডিয়েট অপশন হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্কের মতো আরেকটা এনে তাদেরকে ব্যালেন্স শিট ঠিক করতে বলা”, বলেন মি. হোসেন।

“সেটা না হলে বিদ্যমান ম্যানেজমেন্ট ঠিক করতে হবে। কাজ না হলে বোর্ডটাকেও বদলানোর কথা ভাবতে হবে। সেটাও কাজ না করলে মার্জ। এক্ষেত্রে মার্জে আগ্রহী না হলে শেষমেশ ব্যাংক বন্ধ করে দিতে হবে।”

কিন্তু কোনও ব্যাংক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে তা দেশের জন্য ভালো উদাহরণ তৈরি করে না বলে মনে করেন তিনি।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।