প্রচ্ছদ হেড লাইন ভাঙা হবে সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেই ফ্ল্যাটের কমোড-স্যুয়ারেজ লাইন

ভাঙা হবে সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেই ফ্ল্যাটের কমোড-স্যুয়ারেজ লাইন

হেড লাইন: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকার ডিবির টিম। এ সময় সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেই ফ্ল্যাটে নেওয়া হয় কলকাতায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদ হাওলাদারকে(২৪)। অনলাইনে বসিয়ে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিনজনকে ভিডিও কলে যুক্ত করে জিহাদের সঙ্গে সামনাসামনি জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এলেও মেলেনি সংসদ সদস্য আনারের দেহাংশ।

মঙ্গলবার (২৮ মে) কলকাতা সিআইডিকে আনারের দেহাংশের খোঁজে সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেই ফ্ল্যাটের কমোড, স্যুয়ারেজ লাইন ভেঙে সার্চ করার অনুরোধ করেছেন ঢাকার ডিবির টিম। পাশাপাশি হাতিশালা লেকও সার্চের অনুরোধ করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী কলকাতা সিআইডি চেষ্টা করছে বলেও জানা গেছে। গতকাল সোমবার দিনভর প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই কলকাতায় দুই দেশের তদন্ত কর্মকর্তারা নানা জায়গায় ছুটাছুটি  করেন। সকাল ১০টায় নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন্সে যান বাংলাদেশের গোয়েন্দা টিম। এ সময় কলকাতা সিআইডির কর্মকর্তারাও ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে নেওয়া হয় জিহাদকে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সামনে ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। এরপর তদন্তসংশ্লিষ্টরা পোলেরহাট থানার কৃষ্ণমাটি বাগজোলা খালের কাছে যান।

dhakapost
এমপি আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কলকাতায় যান ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ

হত্যায় জড়িতদের তথ্যমতে, লাশের টুকরো ফেলা হয়েছে বাগজোলা খালে। জিহাদের সঙ্গে ক্যাব চালক জুবেরের বর্ণনা মিলিয়ে দেখতে তদন্তকারীরা নিউ টাউন শহরের একাধিক জায়গায় যান। তবে হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন পার হলেও আজ (২৮ মে) দুপুর ৩টা পর্যন্ত সংসদ সদস্য আনারের দেহাংশের সন্ধান মেলেনি। উদ্ধার হয়নি খুনে ব্যবহৃত চাপাতিসহ অন্য ধারালো অস্ত্রও। ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত দল গত রোববার সকালে কলকাতায় যায়। প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ ও এডিসি শাহীদুর রহমান। মঙ্গলবার(২৮ মে) দুপুরে হারুন অর রশীদ বলেন, কলকাতার তদন্তকারী সিআইডির কর্মকর্তারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। তারা আজও সার্চ করছেন। আমরাও কিছু অনুরোধ করেছি। সঞ্জীবা গার্ডেন্সের দিকে কাঠের পুলটার পাশে যে হাতিশালা লেক আছে, সেখানে সার্চ করতে বলেছি। পাশাপাশি সংসদ সদস্য আনার যে ফ্ল্যাটে ছিলেন সেখানেও সার্চ করতে বলেছি। কারণ, ওই বাসায় তিনটা কমোড আছে। সেখানে ফ্ল্যাশ করার পর জমা পানি যেন সুয়ারেজ লাইনে জমে, সেটাও ভাঙতে বলেছি। অর্থাৎ কমোড ও সুয়ারেজ লাইন ভাঙতে বলা হয়েছে। সঙ্গে লেকও সার্চ করতে বলেছি। আশা করছি সেটা তারা আজকেই করবেন। সিআইডি সংসদ সদস্য আনারের মরদেহের অংশবিশেষ উদ্ধার বা খুঁজে বের করার জন্য কাজ করছেন। ইতোমধ্যে আজ বর্জ্য যেখানে জমা হয় সেখানে সার্চ চলছে।

dhakapost
সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেই ফ্ল্যাটের কমোড, স্যুয়ারেজ লাইন ভেঙে সার্চ করার অনুরোধ করেছেন ঢাকার ডিবির টিম / সংগৃহীত

হারুন বলেন, এমপি আনার হত্যার গুরুত্বপূর্ণ ঘাতক আমাদের কাছে আছে। সঙ্গে যে মেয়েটা ছিল সেও আমাদের কাছে আছে। তারা আমাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্যগুলো নিয়ে আমরা কিন্তু কলকাতা এসেছি। আমরা কিন্তু সেখানে সিআইডির সদর দপ্তর সফর করেছি। তাদের হাতে গ্রেপ্তার আসামি জিহাদকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে মেলা তথ্য দেশে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছি, প্রশ্ন করেছি। প্রায় সব তথ্যই মিলে গেছে। আসামি জিহাদকে নিয়ে ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছি।হারুন দাবি করে বলেন, আমরা প্রায় সব তথ্যের মিল পেয়েছি। ডিজিটাল এভিডেন্সও আছে। ওই মেয়েটা তো সেখানে ছিল। একটা জীবন্ত মানুষ সেখানে গেছেন। ছবি-সিসিটিভি ফুটেজ তো আছে। সবাই বের হলেন কিন্তু এমপি আনার বের হলেন না। সেটারও তো প্রমাণ আছে। তাছাড়া তারা তো সন্দেহজনক ব্যাগ নিয়েও বের হয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ, তাদের(কলকাতার সিআইডি) তদন্ত, আসামিদের বিগত সময়ের অপরাধের আমলনামা; সবকিছু আমলে নিয়ে তারা তদন্ত করবেন। বের করবেন আনার হত্যার রহস্য। তারপর কোর্টে প্রেরণ করা হলে লজিক্যাল ও বিচারিক স্পিরিট কাজে লাগিয়ে মূল রহস্য বের করা সম্ভব হবে বলে মনে করি। ডিবি প্রধান হারুন বলেন, এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বিচার খুব কঠিন হবে বলে আমি মনে করি না। তিন আসামি বাংলাদেশে, একজন এখানে আছে। চারজনের বক্তব্য, জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য পারিপার্শ্বিক তথ্য মিলেছে। ডিজিটাল তথ্য, পারিপার্শ্বিক এভিডেন্স নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা এখনো হতাশ নই। কাজ করছি, আশা করছি তার দেহাংশ উদ্ধার সম্ভব হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পর লাশ টুকরো করার বর্ণনা দিয়েছেন জড়িতরা। কলকাতায় গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদার ওরফে ‘কসাই জিহাদ’ জানান— নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন্সের বাথরুমে টুকরো করা হয় এমপি আজীমের লাশ। এর আগে প্রায় এক ঘণ্টা মরদেহটি মেঝেতে পড়ে ছিল। পরে চারজন মিলে টেনে সেটি বাথরুমে নিয়ে যান। সংসদ সদস্য আনার হত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদার জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, হত্যার পর মাথা কেটে শরীর থেকে আলাদা করার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। এরপর তা টুকরো টুকরো করা হয়। শরীর থেকে চামড়া ছাড়িয়ে আলাদা করা হয় মাংস ও হাড়। লাশ টুকরো করার কাজ জিহাদ করলেও তা গায়েব করার দায়িত্ব ছিল ফয়সালের। অনলাইনে ভিডিও কলে গ্রেপ্তার চারজন মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন। ডিবি প্রধান বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্যকে কলকাতায় হত্যা করা হয়েছে। তদন্তে নেমে এ ঘটনায় বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। কলকাতা পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। যে কায়দায় হত্যা করা হয়েছে, এটা মেনে নেওয়া কঠিন। ঠান্ডা মাথায় লাশের টুকরো গুম করা হয়েছে। যে আলিশান বাড়িতে সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, মনে হয় এখনো সেখানে ঘাতকদের অট্টহাসি শুনতে পাচ্ছি। চাকরিজীবনে অনেক খুনের তদন্ত করেছি। কিন্তু এমন ঠান্ডা মাথার খুন দেখিনি।’

মরদেহ উদ্ধারে কলকাতা পুলিশকে সহযোগিতা করব : ডিবিপ্রধান

এর আগে হত্যার ঘটনার মূল মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি আমেরিকান আখতারুজ্জামান শাহীনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার নির্দেশে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজন গ্রেপ্তার হলেও এখনো পলাতক চারজন। হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকায় পালিয়ে যায় মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহীন ও সহযোগী সিয়াম নেপালে পালিয়ে গেছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দেশ দুটির কাছে সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরো (এনসিবি)।সোমবার(২৭ মে) রাতে এ ব্যাপারে পুলিশ সদরদপ্তরের ইন্টারপোলের শাখা কার্যালয় ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরোর (এনসিবি) এআইজি আলী হায়দার চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুজনকে ফিরিয়ে আনতে আবেদন করা হয়েছে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দুটি দেশকে চিঠি পাঠিয়েছি। দুজনকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সার্বিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন নেপাল থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছেন। তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য সোমবার আমেরিকার এনসিবিকে মেইল করা হয়েছে। পাশাপাশি ইন্টারপোলের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দেশটির পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় আরেক আসামি সিয়ামকে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট দেশকে দুদিন আগে ইন্টারপোলের সহায়তায় চিঠি পাঠানো হয়েছে।

লাশ না পেলে মিলবে না মৃত্যু সনদ, অপেক্ষায় কাটতে পারে ৭ বছর
এমপি আনারের লাশ না পেলে মিলবে না মৃত্যু সনদ, অপেক্ষায় কাটতে পারে ৭ বছর / সংগৃহীত

সূত্রটি বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। সংগত কারণে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরোকে (এনসিবি) আলাদা চিঠি দেওয়া হয়েছে। যেহেতু আনার হত্যায় কলকাতায়ও মামলা হয়েছে এবং ইন্ডিয়ার সঙ্গে আমেরিকা ও নেপালের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। তাদের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কলকাতা পুলিশ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডে যে কয়েকজনের নাম এসেছে তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার চারজন ছাড়াও এখনো পলাতক চারজন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে তিনজন এবং ভারতের কলকাতায় একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।