
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাকে ঘিরে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, পেশাজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকে। তার ঠিক বাম পাশেই দেখা যায়, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম। এমন একটি ছবি প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা যায়।
ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে এমন ছবি থাকার বিষয়ে বিভাগের সিনিয়র হাসান জাহিদের একটি পোস্ট শেয়ার করে নিজের অবস্থানও জানিয়েছেন মানসুরা আলম। তিনি লিখেছেন, ‘কোনো কোনো জিনিসের জবাব দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করি না। কারণ এসব প্রোপাগাণ্ডার কোন ইফেক্ট পড়ে না আমার ওপর। তবুও ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই জাহিদ ভাইকে ধন্যবাদ এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘বড় কথা, এ ছবিটি নিয়ে আমি মোটেও লজ্জিত না। নানা মতের, পেশার সম্মিলনের ছবি ছিল এটি। আইন সমিতির রাজনীতিকরনের আগ পর্যন্ত রাজনীতি ভুলেই আমি সেখানে যেতাম। শুধু যে আমার শোভন ভাইয়ের সঙ্গে ছবি দিয়ে ঝামেলা তা না, শোভন ভাইয়ের ঝামেলা হইতে পারতো তখন আমার ছবি নিয়ে।’
সেগুলো বাদ দিয়েই ছবি উঠেছিলো জানিয়ে মানসুরা বলেন, ‘আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার কনটেম্পোরারি সবাই চেনে। নিজেকে চেনানো, নিজের অবস্থান জানানোর দায় অন্তত গুপ্তদের মতো আমার নেই। আর এ ছবি নিয়ে আমি লজ্জিত বা দু:খিত না।’
হাসান জাহিদ দুটি ছবি দিয়ে ফেসবুক পোস্টে লেখেন, দুটো ছবির ওপরেরটি বাংলাদেশ আইন সমিতির বার্ষিক সম্মেলনের। বাংলাদেশ আইন সমিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন, যেখানে ডিপার্টমেন্টের সকল সাবেক, বর্তমান শিক্ষার্থীরা সমবেত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন বাংলাদেশ আইনসমিতি পেশাদার সংগঠন। এজন্য এখানে কে কোন দল করে, এ বিষয়টি খুব চোখে পড়ে না।
দেখা যায় এখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী কেউ জজ, কেউ অ্যাডভোকেট, কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসা করে, অধিকাংশই জব হোল্ডার হওয়ায় কেউ কাউকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার সুযোগ থাকে না। বরং রাজনৈতিক পরিচয় এড়িয়ে আইন সমিতির প্রোগ্রামগুলোতে সবাই আন্তরিকতা পোষণ করে। আইন বিভাগ থেকে অনেকেই নেতা হয়েছেন, হচ্ছেন, কিন্তু আইন সমিতি আসলে তারা নেতাগিরীটা শো করেন কম। কারণ বাংলাদেশ আইন সমিতি রথী-মহারথীর জায়গা।
বাংলাদেশ আইন সমিতি সবসময় রাজনৈতিক পরিচয় এড়িয়ে সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তরিকতার পরিচয়টাই বড় করে তোলে। এ কারণে বাংলাদেশ আইন সমিতির প্রোগ্রামে সকল রাজনৈতিক ব্যানারের লোককে এক ফ্রেমে দেখা যায়। আমি যখন জেলে ছিলাম আমার পক্ষে যারা মেট্রোপলিটন কোর্টে দাঁড়িয়েছিল, তারা সবাই আমার ক্লাসমেট ছিল। কিন্তু সবার রাজনৈতিক পরিচয় এক ছিল না।
এটাই আইন সমিতির সদস্যদের বিশেষত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, কোটার বিরুদ্ধে লিখে জেলে গিয়েছিলাম। আমার বিরুদ্ধে পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল। এই ৭ দিনের রিমান্ড বাতিলের ব্যবস্থা করেছিল আমাদের আইন বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটরা, যাদের রাজনৈতিক পরিচয় ভিন্ন ছিল। ছবিতে, ডিপার্টমেন্টের ছোট বোন মানসুরাকে দেখানো হয়েছে যে, সে আওয়ামী লীগের ব্যানারে ছিল, এখন বিএনপি করে।
বিষয়টা ভুল জানিয়ে তিনি বলেন, মানছুরা কোনো কালেও আওয়ামীপন্থী ছিল না। এটি আমাদের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন বাংলাদেশ আইন সমিতির বার্ষিক সম্মেলনের ছবি, যেখানে সিনিয়র-জুনিয়র একসাথে ছবি তোলার জন্য যুদ্ধ লেগে যায়। কারণ এ ছবিগুলোই স্মৃতি। ২০-৩০ বছর পর এই ছবির মানুষগুলোই রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, এই স্মৃতি কে ধরে রাখতে না চায়?










































