প্রচ্ছদ সারাদেশ বিয়ের পিঁড়িতে বসার ভাগ্য হলো না প্রিয়ার

বিয়ের পিঁড়িতে বসার ভাগ্য হলো না প্রিয়ার

দেশজুড়ে: আমার স্বপ্ন ভেঙে গেল। বিয়ের পিঁড়িতে বসার ভাগ্য হলো না। আমি কী নিয়ে বাঁচব। আমাকে তোমরা ওর সঙ্গে রেখে আসো। আমাকে বাড়িতে নিও না। বাড়িতে আমি একা থাকতে পারব না।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন প্রিয়া (২০)।

সাইফুল ইসলাম সুমনের সঙ্গে প্রিয়ার আজ বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ে নিয়ে প্রিয়া ও সুমনের স্বপ্নও ছিল অনেক। শুধু সুমনের বিয়ে নয়, সুমনের আরেক ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতিও নিয়েছিল পরিবার।

বিয়ে উপলক্ষে বাড়ি সাজানো হয়েছিল নানা রঙের ঝলকানি বাতি দিয়ে। দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজন এসেছেন। কেউ রং খেলছে আবার কেউ নৃত্য করছে। কেউ স্মৃতিচারণ করছেন। বিয়েতে কে যাবে, কে যাবে না এটা নিয়ে দফায় দফায় তালিকা হচ্ছিল। দুই ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি এবং সুমনদের মিলে তিন বাড়িতে একই রকম আয়োজন চলছিল। কিন্তু না, প্রকৃতির নিয়ম খুব নিষ্ঠুর। একটি দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল। বিয়ের অনুষ্ঠানে এখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চারদিকে শুধু কান্নার শব্দ।

ছোট দুই ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে ময়মনসিংহ থেকে এসেছিল বড় ভাই মনিরুল ইসলাম মমিন। বড় ভাইকে আনতে জেলার দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে যায় সাইফুল ইসলাম সুমন। দুই ভাই মোটরসাইকেল নিয়ে ছুঁটছে বাড়ির দিকে। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১২টা ৫ মিনিট।

দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের মোকবুলের দোকান নামক স্থানে আসার পর বালুবাহী ড্রাম ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বড় ভাই মনিরুল ইসলাম মোমিনের। স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর সাইফুল ইসলাম সুমনও মারা যান। মুহূর্তেই এই সংবাদ ছড়িয়ে পরে বিয়ে বাড়িতে। এক নিমিষে তিন বাড়িতে নেমে আসে শোকের ছায়া। মর্মান্তিক এই খবরে বিয়ে বাড়িতে ছুটে আসেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ।

নিহতদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় স্বজনদের সাথে। তারা বলেন, বেপোরোয়া চালক, অবৈধ গাড়ি মহাসড়ক দখল করে রেখেছে। তবে উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযান নেই। যে কারণে মাঝে মধ্যে ঘটে ছোট বড় দুর্ঘটনা। কিন্তু অপরাধীরা কোনো শাস্তি পায় না। তবে সুবিধাবাদীরা সুবিধা পায় নিয়মিত।

নিহত সুমন ও মমিনের খালু মো. হালিম বলেন, কী বলব। কীভাবে বলব। চোখের সামনে দুই ভাইয়ের লাশ দেখব এটা কখনো ভাবি নাই। আজ এই বাড়িতে বিয়ের আয়োজন। দুই ভাই একসঙ্গে বিয়ে করতে যাবে। একটি দুর্ঘটনায় কত মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে গেল।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাত ১২টা ৫ মিনিটে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের মোকবুলের দোকানের সামনে বালুবাহী ড্রাম ট্রাকের চাপায় দুই ভাইয়ের নিহতের ঘটনা ঘটে। নিহত দুই ভাই মনিরুল ইসলাম মমিন ও সাইফুল ইসলাম সুমন রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানাখানাপুর এলাকার মোকছেদ আলী সরদারের ছেলে।

নিহত বড় ভাই মমিনের স্ত্রী রিক্তা আক্তার বলেন, আমাদের একটি বাচ্চা সন্তান আছে। এই শোক কীভাবে সইব, শেষ দেখাও হলো না আমার সাথে, কথাও হলো না। এ জীবন তো আমি চাইনি। কীভাবে বাঁচব আমি!

নিহতের ভাই শামিউল ইসলাম শামীম বলেন, আমার দুই ভাই ছিল, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেল। আমার আপন ভাই বলে আর কেউ থাকল না। আমি বড় একা হয়ে গেলাম। তিনি বলেন, এ বিষয়ে হাইওয়ে থানায় অভিযোগ করেছি। রোববারে আমাদের নিজ বাড়িতে বাদ জোহর আমার ভাইদের জন্য দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

নিহতের বাবা মো. মোকশেদ সরদার বলেন, আমার তিন ছেলের মধ্যে দুজনই নেই। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বাড়িতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলে। আমার বড় ছেলে মমিনকে এগিয়ে আনতে যায় ছোট ছেলে সুমন। কিন্তু তারা কেউই আর ফেরেনি। যাওয়ার আগে একবারও আমার কাছে বলে যায়নি। কীভাবে ওদের ছাড়া বাঁচব আমি।

রাজবাড়ী আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার ওসি মো. আব্দুল হালিম জানান, এ ঘটনায় একটি ড্রাম ট্রাক আটক করা হয়েছে। তবে চালক ও ট্রাকের সহকারীকে আটক করা যায়নি। এ বিষয়ে নিহতের মেজো ভাই শামিউল ইসলাম শামীম বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।