প্রচ্ছদ সারাদেশ বিয়ের অনুষ্ঠানের জায়গায় আত্মীয়রা গিয়েছে জানাজা পড়তে

বিয়ের অনুষ্ঠানের জায়গায় আত্মীয়রা গিয়েছে জানাজা পড়তে

সবেমাত্র পারিবারিকভাবে আক্‌দ সম্পন্ন হয়েছিলো সানজিদার। এপ্রিলের দিকে ঘটা করে হওয়ার কথা ছিলো বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু এরই মাঝে ঘটে যায় বিপত্তি। দাম্পত্য জীবন শুরু করার আগেই সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার বাসিন্দা রায়হান উদ্দীনের প্রাণ।

আক্‌দের দুই দিন না যেতেই স্বামী হারালেন সানজিদা। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন সানজিদা। স্বামীর পরা সোয়েটার বুকে জড়িয়ে বিলাপ করতে থাকেন তিনি। কেবল বলছিলেন, ‘আল্লাহ কেন এমন করল!’ এ সময় তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন স্বজন ও বন্ধুরা।

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকায় ডিসি পার্কের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বেসরকারি চাকরিজীবী রায়হান উদ্দিন (৩০)। কর্মক্ষেত্র থেকে চট্টগ্রাম শহরের বাইরের ‘আউটার রিং’ হয়ে হাটহাজারী উপজেলায় বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। হঠাৎ সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরিতে ধাক্কা লাগে মোটরসাইকেলের। সঙ্গে সঙ্গে তার মাথার হেলমেট খুলে পড়ে যায়। গতি থাকায় আরেক দফা ওই লরিতে ধাক্কা লাগে। এতেই তার মৃত্যু হয়।

মোটরসাইকেলের পেছোনে ছিলেন সহকর্মী মুবিনুল ইসলাম (২৮)। তিনিও দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন মুবিনুল।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম জানান, দুর্ঘটনায় নিহত রায়হানের কেবল মাথা ও হাতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার মাথার সামনে ও পেছনের হাড় ভেঙেছে। ভেঙেছে হাতের কবজিও। আর আহত মুবিনুলের চোয়াল ও বুকের হাড় ভেঙেছে।

রায়হান উদ্দিন হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া এলাকার মৃত নাজিম উদ্দিনের ছেলে। সোমবার দুপুরে জানাজা শেষে তাকে বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। পরিবারের বড় ছেলে রায়হান তার মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে নিজ বাড়িতে থাকতেন। তার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন মা, ছোট ভাই ও স্বজনেরা।

স্বজনেরা জানান, শুক্রবার পারিবারিকভাবে আক্দ সম্পন্ন হয় রায়হান ও সানজিদার। দুজন অনেক খুশি ছিলেন। সামনে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের কথাবার্তা চলছিল। নতুন জীবন শুরু করার আগেই তাদের এই পরিণতি হলো। বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিলো সবার, এখন এসেছি জানাজা পড়তে।

নিহত রায়হান উদ্দিন চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তার মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী রায়হানকে শেষবার দেখতে ছুটে যান তার গ্রামের বাড়িতে। জানাজার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। জানাজা শেষে কথা হয় রায়হান উদ্দিনের বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের বন্ধু আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই তো গত শুক্রবার সবাই মিলে তার আক্দ শেষে ছবি তুললাম, গল্প করলাম। দুই দিন পর সবাই মিলে এলাম তার জানাজা পড়তে।’

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।