
ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শোকাহত পুরো দেশ। এদিকে ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নামে ভেরিফায়েড একটি ফেসবুক পেজের পোস্ট নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। গত রোববার (২০ জুলাই) ওই পেজে বলা হয়, ‘একটি স্কুল ভবন ধসে পড়তে যাচ্ছে, যার ফলে বহু শিশু প্রাণ হারাবে। আমরা এক ভয়াবহ বিপর্যয় এগিয়ে আসতে দেখছি। এই বিপর্যয়ের মূল কারণ হবে ভবনের অবহেলাজনিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব এটি ঠেকাতে। আমি একজন স্থপতি হিসেবে এই বার্তা দিচ্ছি।’
সোমবার (২১ জুলাই) দুর্ঘটনার পর ওই একই ফেসবুক পেজ থেকে আরেকটি পোস্ট আসে। এতে বাংলাদেশের বিমান দুর্ঘটনার ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, ‘আমরা সবসময় আগেভাগেই সতর্কবার্তা পাঠাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেগুলো গুরুত্ব পায় না। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক।’ পোস্টে আরও বলা হয়, ‘বর্তমানে একের পর এক বিপর্যয় ঘটছে। তাই আমাদের বার্তাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং আগে থেকেই প্রতিকার খুঁজুন—না হলে ক্ষতির দায় আপনাকেই নিতে হবে।’
এসব খবরে মুহূর্তের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হুলস্থুল শুরু হয়। অনেকেই তাদের সেই পোস্ট শেয়ার করে এক ধরণের আতঙ্ক-উদ্বিগ্নের কথাও প্রকাশ করেন। তবে বিষয়টি বেশি দূর গড়ানোর আগেই এই ফেসবুক পেজের মুখোশ উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশের কয়েকজন সাইবার বিশেষজ্ঞ। তাদেরই একজন প্রোবফ্লাই আইটি’র ফাউন্ডার আব্দুল্লাহ আল ইমরান।
পেজটি কারা পরিচালনা করছে, তাদের তালিকা বের করেছেন ইমরান ও তার দল। তিনি জানিয়েছেন, এটি মূলত একটি স্ক্যামিং পেজ। যারা অনলাইন বেটিং বা জুয়ার সাইটসহ বিভিন্ন স্ক্যামিং নিয়ে কাজ করে। এই সাইবার বিশেষজ্ঞ জানান, ‘আমাদেরই এক সহযোদ্ধা শুভ ও আমার দল মিলে এই পেজ কারা পরিচালনা করছে তাদের তথ্য বের করেছি। এই পেজটি মূলত চারজন ব্যক্তি চালাচ্ছে। এদের মধ্যে দুইজন নাইজেরিয়ান, একজন আমেরিকান।’
‘এরা মূলত অনলাইন বেটিং বা জুয়ার সাইটসহ বিভিন্ন স্ক্যামিং নিয়ে কাজ করে। গত রোববার তাদের পেজ থেকে কোনো একটি বিদ্যালয়ের ভবন ধ্বসে পড়তে পারে— এমনটা অনুমান করে পোস্ট করা হয়। পরদিনই উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি ঘটায়, অনেকেই ভাবতে শুরু করেন এর পেছনে হয়তো এই পেজের স্ট্যাটাসের সম্পর্ক থাকতে পারে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই পেজ থেকেও আরও কিছু গুজব ছড়ানো শুরু হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এই সুযোগে নিজেদের ফেসবুক পেজে কিছু অনুসারী বাড়িয়ে নেওয়া। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরণের ভীতি সৃষ্টি করা।’
ইমরান জানালেন, ‘তাদের টিম খুব দ্রুতই এই পেজ কারা পরিচালনা করছেন, সেই ব্যক্তিদের পরিচয় বের করার পরপরই আইডিগুলো ডিয়েক্টিভেট করে দেওয়া হয়েছে। ফলে পেজটিও এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘এ ধরণের পেজ থেকে ছড়ানো কোনো গুজবে আপনারা কান দেবেন না। বরং দেশের এমন কঠিন এক সময়ে সত্য তথ্যগুলো ছড়িয়ে দিন, কোনো মিথ্যা বা গুজবকে প্রাধান্য না দিয়ে।’
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি বাংলাদেশের সাবেক ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির জানিয়েছেন, এটি অ্যানোনিমাস হ্যাকার গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু নয়। অ্যানোনিমাস-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যে ফেসবুক পেজ দেয়া আছে সেটি এই পেজ নয়।
এছাড়াও এই পেজটি ঘেঁটে জানা গেছে, এটি একটি অনলাইন জুয়ার পেজ। মূলত অনলাইন জুয়া প্রমোট করা (টিকিট বিক্রির), নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তারা অনলাইন গেমিং বা জুয়া সংক্রান্ত পোস্ট দেয়।