
রাজশাহীতে বিচারকের ছেলে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে তার জ্ঞান ফিরেছে। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
তিনি নিজেকে মো. লিমন মিয়া বলে পরিচয় দিয়েছেন। বাড়ি গাইবান্ধায়। তিনি দাবি করেছেন, ফুলছড়ি উপজেলার বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান এএইচএম সোলাইমান তার বাবা। ফুলছড়ি হাটে তার ব্যবসার শেয়ার রয়েছে। সাত বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন, জানান লিমন মিয়া।
লিমন মিয়া বলেন, তার সেনা নম্বর ১২৩২৮০৯। ঢাকায় জুলাইয়ে তিনি গণঅভ্যুত্থানে ছিলেন; হাসনাত আব্দুল্লাহদের সঙ্গে তার ছবি আছে। তিনি দাবি করেন, তিনি শেখ হাসিনার স্বৈরাচার সরকার পতনের আন্দোলনে ছিলেন ও তিনি জুলাইয়ের যোদ্ধা।
বৃহস্পতিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে লিমন বলেন, ঘটনাটি উল্টে সাজানো হয়েছে। বিচারকের স্ত্রী লুসির সঙ্গে তার গত পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল; তিনি লুসির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, গোলাপ দিয়ে এক প্যাকেট বাদাম ও দুই প্যাকেট পপকর্ন দিয়েছেন। এ নিয়ে তাদের মাঝে ঝামেলা হয়েছিল; তাকে শুল্ক বিভাগে (সিলেটে) কয়েক দিন জেলে রাখা হয়েছিল— রিসেন্ট ৪/৫ দিন আগে। লিমন বলেন, তাদের সম্পর্ক কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে শুরু হয়েছিল এবং লুসি বলেছিল বিয়ে করবেন; তিনি রাজি হননি। একবছর পর লুসি তার মেয়েকে বলেছিলেন, মামার সঙ্গে প্রেম করো। এমনভাবে সম্পর্ক চলার পর হঠাৎ লুসি তাকে চিনে না। এতে লিমন মারাত্মক মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, জামাইয়ের ক্ষমতায় তাদের ভয় দেখানো হয়—তাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল, এমন কথাও শুনিয়েছেন।
লিমন আরও বলেন, ম্যাসেঞ্জারে তাকে ভয় দেখানো হয়েছিল এবং তার ভালোবাসা প্রমাণ করার কথা বলা হয়েছিল। তাসমিনা লুসিকে তিনি জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসেন, তাই সাহস দেখাতে তিনি সেখানে গিয়েছেন। সেখানে গেলে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজনকে দিয়ে তাকে মারধর করা হয়। মারার পর তাকে থানায় দেওয়া হয়; থানায় তিনি সারারাত ছিলেন। জেলে থাকার পর তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের লিমন বলেন, সেখানে গিয়ে তিনি লুসিকে ফোন করেন, আলোচনার জন্য এসে চা পানের প্রস্তাব দেন। লুসি প্রথমে বলেন তুমি যাও আমি আসছি। পরে ফাঁকি দিলে তার ভয় বেড়ে যায়। লুসি পাশের ঘরে গিয়ে পুলিশে খবর দেওয়ার হুমকি দেয়। এর আগে তার বাবার মান-সম্মান নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার বাবাও ফুলছড়ি উপজেলার বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়ায় পরিবারের মান-সম্মানের কথা ভাবতে গিয়ে তিনি রেগে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, দরজার তালা ভেঙে তিনি ঘরে প্রবেশ করেন; সেখানে এক পর্যায়ে লুসির ওপর হামলা করেন, এরপর বাচ্চাটি এসে তাকে মারতে শুরু করে। তাকে দুই হাতে মারধর করলে তিনি পা দিয়ে আত্মরক্ষা করতে গিয়ে বিচারকের ছেলের পায়ের ওপর কামড় দেন। এরপর তিনি ঘটনা জানেন না; এখনও স্মৃতিভ্রংশ রয়েছে বলে দাবি করেন।
লিমন আরও জানান, অভিযোগকারীরা ক্ষমতাশালী—তারা ডাকলেই প্রশাসন সমর্থিত লোকজন উপস্থিত হয়। তিনি নিজের মধ্যবিত্ত ও অসহায় অবস্থার কথা বলছেন এবং ন্যায়বিচার চান। তিনি বলেন, যদি আমি পরকীয়া করে অপরাধ করে থাকি, তাহলে বিচার হওয়া উচিত; তবে যদি অন্যরা অন্যায় করে থাকেন, তাদেরও বিচার হওয়া উচিত। ন্যায়বিচারে যদি আমাকে ফাঁসি দেওয়া হয়, আমি আলহামদুলিল্লাহ বলব।
বিচারকের স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লিমন বলেন, লুসিকে আমি পাঁচ বছরে জীবনের থেকে বেশি ভালোবেসেছি; সে যদি আমাকে হত্যা করে বা ফাঁসি দেয় তবুও আমি লুসিকে ভালোবাসব।
বিচারকের ছেলে খুন প্রসঙ্গে লিমন বলেন, ছেলেকে আমি মারতে যাইনি। যখন আমি লুসির সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছিলাম, তখন লুসির ছেলে এসে আমাকে আক্রমণ করে; আত্মরক্ষা করতে গিয়ে ছেলের পায়ে কামড় দিয়েছি। এরপর কি ঘটেছে আমি জানি না; কামড়ে মারা যাওয়া সম্ভব নয়।
প্রেমের সম্পর্ক সম্পর্কে লিমন বলেন, আমার কাছে অসংখ্য ফোনকল রেকর্ড আছে। লুসির সঙ্গে অন্য একটি ছেলেরও সম্পর্ক ছিল; তার নাম মাসুদ। লুসি ওই ছেলের সঙ্গে ১২ থেকে ১৪ বছর প্রেম করেছেন।
সূত্র : আরটিভি











































