
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় মেলার স্টলে এক বিএনপি নেতার চাঁদাবাজির একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সুখরঞ্জন ওরফে ধলুকে মেলার দোকান থেকে চাঁদার টাকা তুলতে দেখা যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ গাইন।
ফেসবুকে মেলায় বিএনপি নেতার চাঁদাবাজির ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ঘটনাটি ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে অনিমেষ গাইন বলেন, ‘মেলায় চাঁদাবাজির ভিডিও ফেসবুকে দেখেছি। সেখানে ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ধলুকে দোকান (স্টল) থেকে টাকা তুলতে দেখা গেছে। উপজেলার সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কার্তিক পূজা উপলক্ষে গত ১৮ নভেম্বর থেকে উপজেলার নৈয়ারবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মেলার আয়োজন করেন স্থানীয়রা। শুক্রবার মেলাটি শেষ হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৈয়ারবাড়ী মেলা আয়োজন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেতা ধলুর নেতৃত্বে একটি দল মেলায় স্টলপ্রতি ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করেছে। এ মেলায় জেনারেটরের জন্য দোকানপ্রতি ৩০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ধলুর ছেলে ছাত্রদল নেতা উত্তমের বিরুদ্ধে।
মেলার ফুচকা ও চটপটির স্টল মালিক কোটালীপাড়া উপজেলার শ্রীফলবাড়ি গ্রামের পুলিন মৃধা জানান, তিনি ও তার ভাই মেলায় দুটি চটপটির দোকান দিয়েছিলেন। ধলুর নেতৃত্বে তার কাছ থেকে তিন হাজার ৫০০ ও তার ভাইয়ের দোকান থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা নেওয়া হয়েছে। চাঁদা না দিলে দোকানে হামলা চালানোর হুমকি দেয়। ভয়ে সবাই টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে। তিনি আরও জানান, মেলায় প্রায় দেড়শ স্টল রয়েছে। তাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি সারাবছর বিভিন্ন এলাকার মেলায় স্টল দেন। এভাবে কোথাও চাঁদা নেওয়া হয় না।
মেলার কসমেটিকস স্টলের মালিক কলাবাড়ি গ্রামের আকাশ অধিকারী বলেন, আগে মেলার সময় এখানে অনুষ্ঠান হতো। তখন পুরস্কার ও অনুষ্ঠানের ডেকোরেশনের জন্য স্টল মালিকরা খুশি হয়ে কিছু টাকাপয়সা দিত। এখন কোনো অনুষ্ঠান হয় না। অথচ জোর করে ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছেন ধলু ও নৈয়ারাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাসুদেবের নেতৃত্বে কয়েকজন।
এ মেলায় আনন্দ বিশ্বাস ও লক্ষ্মী বিশ্বাস দম্পতি চায়ের দোকান দিয়েছেন। লক্ষ্মী বিশ্বাস বলেন, ‘আমি কান ধরেছি এ মেলায় আর কোনোদিন আসব না। এবারই প্রথম এসেছি। এখানে যে অরাজকতা, তা কোথাও নেই। সামান্য চায়ের দোকান থেকে ৫৫০ টাকা চাঁদা নিয়েছে। আমাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। অন্যদিকে জেনারেটর ব্যবহারের জন্য ৩০০ টাকা দিতে হয়েছে ধলুর ছেলে উত্তমকে। টাকা না দিলে মালপত্র নিয়ে যাওয়াসহ মারধরের হুমকিও দেওয়া হয়।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে সুখরঞ্জন ধলু ও নৈয়ারবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাসুদেবের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা সাড়া দেননি।
ভাঙ্গারহাট নৌ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক এমদাদুল হক বলেন, মেলার জন্য পুলিশের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে প্রতিবছরই এখানে মেলা হয়ে আসছে। এ বছর মেলার চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। কেউ চাঁদাবাজির শিকার হয়ে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাগুফতা হক বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেলা বা সমাবেশ করতে হলে জেলা প্রশাসক স্যারের অনুমতি নিতে হয়। এর পরও মেলায় চাঁদাবাজির বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।












































