
কিশোরগঞ্জে বিএনপির এক নেতার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘটনা নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এমনকি সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া একটি লাইভে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার বক্তব্যে কৌতুহল তৈরি হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিনের পিতা প্রয়াত ডা. আবু আহমদ ফজলুল করিম কিশোরগঞ্জ সদর আসনের বিএনপি নেতা ও সংসদ সদস্য ছিলেন। ফজলুল করিম বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
কিন্তু তার ছেলে ফয়জুল করিম মুবিন কেন আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন এবং এর পেছনে কোন রাজনৈতিক চিন্তা কাজ করেছে, এমন প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। বিশেষ করে যখন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম এখন নিষিদ্ধ রয়েছে। দলটি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে মুবিনের আওয়ামী লীগে যোগদান নিয়ে স্থানীয় বিএনপিতেও নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
ফয়জুল করিম মুবিন বলেছেন, পাঁচই অগাস্টের পর মানুষ যে পরিবর্তন দেখতে চেয়েছিল, তা হয়নি বলেই ভেবেচিন্তে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তবে এই ঘটনায় বিব্রত কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি। মুবিন কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। জেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, দলের সাবেক নেতার ছেলে যে নিজেও দলের পদে ছিলেন, তার এমন সিদ্ধান্ত অবাক করেছে তাদেরকে।
মূলত কিশোরগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপি নেতার ছেলে হওয়া এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে কথা বলায় তাকে ঘিরে কৌতূহল তৈরি হয়। বুধবার নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে তিনি শেখ হাসিনার দেশে ফেরা এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন।
যেখানে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা যেহেতু বলেছেন, তিনি অবশ্যই দেশে ফিরবেন। আমি রাজনীতি করেছি দেশের জন্য, দলের জন্য নয়। এখন মনে করছি, দেশের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার প্রয়োজন।’
ফেসবুক লাইভে মুবিন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি এখন নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের নয়, তিনি এই দেশের স্থিতিশীলতার প্রতীক। দেশ ও জনগণের স্বার্থে এখন ঐক্যের সময়।’
আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার বিষয়ে মুবিন বাংলাকে বলেন, ‘পাঁচ অগাস্টের পর মানুষ যে নতুন বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিল, তা হয়নি। সম্পদ লোভী, ক্ষমতা লোভী, পদ লোভীরা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার যে চেষ্ট করছে, তাহলে শেখ হাসিনার ভুলটা কোথায় ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন রাষ্ট্রপরিচালনা করতে গিয়ে হয়তো শেখ হাসিনার কিছু ভুল ছিল। তবে তিনি কখনো দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্যই কাজ করেছেন। শেখ হাসিনার সময় যত উন্নয়ন হয়েছে, দেশের আর কখনো এতটা উন্নয়ন হয়নি।’
এমন প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করেন বলেই শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। যদিও নানা অনিয়ম, নির্যাতনের কারণে গত সতের বছরও রাষ্ট্রযন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন মুবিন।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যখন আপনি আদর্শিক বিষয় নিয়ে লড়বেন, তখন কারো সঙ্গে কথা বলাটা খুব একটা জরুরি বিষয় নয়, কারণ আমি তো কোনো পদ চাই না। বরং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা আমাকে যতটা ভালোবাসা দিয়েছে, আমি সেটা নিয়ে বাকি জীবন আওয়ামী লীগ করে মৃত্যুবরণ করতে পারব।’
জানা গেছে, অ্যাডভোকেট ফয়জুল কবীর মুবিন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির উপ-দপ্তর সম্পাদক এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত পাঁচ অক্টোবর ফেসবুকে পোস্ট করে বিএনপি থেকে পদত্যাগের কথা জানান মুবিন। তবে পদত্যাগ করলেও তার আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিব্রত জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘তার বাবা পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রী ছিলেন বলেই তাকে আমরা স্পেস দিয়েছি, কম বয়সেই জেলা কমিটিতে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে এমনটা কেনো হলো সেটা তো আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’
‘আমার মনে হয় সে মানসিকভাবে অসুস্থ, নাহলে এমন করার তো কথা না,’ এমন মন্তব্যও করেন বিএনপির নেতা মাজহারুল ইসলাম।










































