
চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত এক প্রকার মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে। চেম্বারের নেতৃত্বে আসতে তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে আনছে অভিযোগ। বিএনপিপন্থিরা বলছেন, এখন যারা জামায়াতপন্থি সেজেছেন তারা নিজেরাই আওয়ামী লীগের ভেতরে ছিলেন। শুধু ভোটের জন্য অন্যদের ফ্যাসিবাদী ট্যাগ দিচ্ছেন। আবার জামায়াতপন্থিদের অভিযোগ, বিএনপিপন্থিরা ভোটে জিততে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এমএ লতিফের লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করছেন। তবে সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাইরে ফ্যাসিবাদী বলে সবাই ধুয়া তুললেও স্বার্থের বেলায় দুপক্ষই আওয়ামী লীগকে কাছে টেনে চেম্বারের নেতৃত্ব বাগিয়ে নিতে চান।
ঘোষিত শিডিউল অনুযায়ী, ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচন। শনিবার ছিল মনোনয়ন ফরম গ্রহণের শেষ দিন। আজ জমাদানের শেষ দিন। গ্রহণের শেষ দিনে ৬০টির উপরে ফরম বিক্রি হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। ৫ আগস্ট তীব্র গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর চট্টগ্রাম চেম্বারে এমএ লতিফের ছেলে ওমর হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন সর্বশেষ পরিষদ বিএনপি-জামায়াতের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে পদত্যাগে বাধ্য হয়। কিন্তু নতুন করে শিডিউল ঘোষণার পর ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দুপক্ষ আলাদা হয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। চট্টগ্রাম চেম্বারে নতুন মেরুকরণে বর্তমানে একদিকে রয়েছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ভাই আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। অন্যদিকে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এসএম ফজলুল হকের ছোট ভাই এসএম নুরুল হক। আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে আছেন বিএনপিপন্থি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিরুল হক। অন্যদিকে এসএম নুরুল হকের সঙ্গে আছে জামায়াতপন্থিদের ছায়া। তার সঙ্গে রয়েছেন জামায়াতপন্থি ব্যবসায়ী নেতা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি শাহজাহান মহিউদ্দিন। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দুপক্ষের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ বেড়েই চলেছে। বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সচেতন ব্যবসায়ী সমাজ ও ফাউন্ডেশন যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে। এতে চট্টগ্রাম সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এসএম নুরুল হক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। উপস্থিত ছিলেন শাহাজাহান মহিউদ্দিনও।
এতে চট্টগ্রাম চেম্বারকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সংগঠন হিসাবে ব্যবহারের নীলনকশার অভিযোগ আনা হয় আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এসএম নুরুল হক অভিযোগ করেন, টাউন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ ও ট্রেড গ্রুপ পুরোটাই চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি এমএ লতিফের নিয়ন্ত্রণে। সেই গ্রুপগুলোকেই পুনর্বহালের মাধ্যমে চেম্বারে আওয়ামী দোসর ও পরিবারতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা করছেন আমির হুমায়ুন। এসএম নুরুল হক বলেন, পটিয়া অ্যাসোসিয়েশন থেকে ভোটার হয়েছেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি এমএ লতিফের ছেলে ওমর মুক্তাদির। একইভাবে রাঙ্গুনিয়া অ্যাসোসিয়েশন থেকে ভোটার হয়েছেন আবছার হাসান চৌধুরী জসিম। তিনি এমএ লতিফের মামাতো ভাই জহুর আলমের ভায়রা ভাই। অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপের যেকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক বা ভোট রয়েছে সবকটিই এমপি লতিফের নিয়ন্ত্রণে। এখন সেই লতিফের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, একটি সংবাদ সম্মেলনে এসএম নুরুল হক আমার বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আঁতাত করা বা এমএ লতিফের পরিবারের সদস্যদের চেম্বারে পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। চেম্বারে নমিনেশন ফরম কারা কিনেছেন, কারা জমা দিয়েছেন সেই তালিকা হাতে নিলেই দেখা যাবে আমরা কারও সঙ্গে আঁতাত করেছি কিনা, অথবা লতিফের পরিবারের কেউ নির্বাচনে আসছেন কিনা। দীর্ঘ দুই দশক লতিফের নিয়ন্ত্রণে ছিল চেম্বার। আমরা সেই চেম্বারকে লতিফমুক্ত করেছি তাদের পুনর্বাসনের জন্য নয়। সাধারণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার জন্যই কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, এসএম নুরুল হক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কেবিনেটে চট্টগ্রাম চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার আপন ছোট বোনের স্বামী আল মাসুমকে চেম্বারের পরিচালক বানান। এমএ লতিফ এসএম নুরুল হককে পরে চেম্বারে নিতে না পারায় তার সুপারিশ বা নমিনেশনেই এফবিসিসিআই পরিচালক বানিয়েছেন। আবার নুরুল হকের ছোট ভাই শফিউল হককে চট্টগ্রাম চেম্বারে এমএ লতিফের কেবিনেটে ভাইস প্রেসিডেন্ট বানানো হয়। সবকিছুই করা হয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে। এখন সেই নুরুল হক আমার বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলছেন যা দুঃখজনক ও হাস্যকর।
জামায়াতপন্থি ব্যবসায়ী নেতা হিসাবে পরিচিত শাহজাহান মহিউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে ফ্যাসিবাদীদের পদত্যাগে বাধ্য করতে বিএনপি-জামায়াত একসঙ্গে আন্দোলন করেছে সেটা ঠিক। তবে নির্বাচন সামনে রেখে মতদ্বৈততা তৈরি হয়েছে। একটি গ্রুপ পুনরায় ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে এ কারণে। এখানে আমাদের প্রধান অভিযোগ ছিল টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপের ভোটার নিয়ে। এই সিস্টেমটা ফ্যাসিবাদীরা চালু করেছিল চেম্বারে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য। এই দুই গ্রুপে ৬ জন পরিচালক অটো নির্বাচিত হয়ে যান। বাকি ১৮ জন পরিচালককে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। এটা এক ধরনের বৈষম্য। দেশের অন্য কোনো চেম্বারে এই নিয়ম নেই। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি।
সূত্র: যুগান্তর