রাজনৈতিক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি একনায়কতন্ত্র হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে একদলের শাসন মনে হচ্ছে কিন্তু এটি এক দলের শাসন নয়, এক ব্যক্তির শাসনে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি মিডিয়ায় দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ঢাবির এই অধ্যাপক। আসিফ নজরুল বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বলেছিলাম, বাংলাদেশে ভোটার ৬ বা ৭ কোটি নয়, ভোটার আসলে একজন। উনার (শেখ হাসিনা) না চাওয়াতে কেউ নির্বাচিত হয়েছেন- এটা আমি বিশ্বাস করি না।
তিনি বলেন, দেশে যে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, এটা থেকে বের হওয়া অনেক কঠিন। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকারকে সরানোর একটিই পদ্ধতি জানি, সেটি হচ্ছে গণআন্দোলন। কিন্তু এই সরকার এতো বছর থেকে ক্ষমতায় থাকার কারণে প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে নিরবচ্ছিন্ন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।
অন্যদিকে তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে অব্যাহত সমর্থন নিচ্ছে। এই দুটো ঘটনা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একেবারেই অপ্রত্যাশিত; যা কখনো এর আগে ঘটেনি। আমরা একনায়কতন্ত্র এরশাদের বিরুদ্ধে লড়েছি, তখন দেশের অভ্যন্তরে তার এত শক্তিশালী ক্ষমতা ছিল না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ নজরুল মনে করেন, এ সরকারকে সরাতে হলে সব বিরোধীদল ও সাধারণ মানুষের ঐক্যের প্রয়োজন। সেই ঐক্যের তাগিদ ও চাহিদা আছে কিন্তু বিভিন্ন কারণে সংগঠিত করা যাচ্ছে না। সেই ঐক্যেকে সংগঠিত করার অনেক ক্ষেত্রে দক্ষতারও অভাব আছে। সেটা কাটিয়ে উঠতে পারলেই এই একনায়কতন্ত্র পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যাবে।
সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার মতো তো মাঠে কোনো কার্যকরী বিরোধী দল নেই?
এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, কার্যকরী নেই এটাকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন? জনসমর্থনের সেন্সে যদি বলেন, তাহলে আওয়ামী লীগের থেকে বিএনপি অনেক জনপ্রিয়। বিএনপির অত্যন্ত শক্তিশালী জনসমর্থন রয়েছে। এরপরও কেন আওয়ামী লীগকে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে পারছে না বা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যূত করতে পারছে না বিএনপি। এটার কারণ অনেক রয়েছে বলে আমি মনে করি।
বিএনপিকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপিকে সমস্যা চিহ্নিত করে খুঁজে বের করতে হবে। সাধারণভাবে আমার মনে হয়, একটা দলে এতো সমর্থন আছে তারপরও আন্দোলন কেন সফল হচ্ছে না।
এক্ষেত্রে ভেবে দেখতে হবে, নেতৃত্বে কোনো সমস্যা আছে কিনা? বিশেষ করে ঢাকা শহরে নেতৃত্ব, স্থায়ী কমিটির মধ্যে কোনো সমস্যা আছে কিনা? তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের অভিজ্ঞতাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন নেওয়া হয় কিনা? ব্যর্থতা কোথায় এটা গবেষণা করা জরুরি। সেটা করতে হবে যোগ্য লোক দিয়ে। প্রয়োজনে বাইরের লোক দিয়ে স্টাডি করানো যেতে পারে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য এখন বিএনপিরই শক্তি আছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের যারা নাগরিক আছেন, তাদের বুঝতে হবে বিরোধী দল দুর্বল হলে আপনিও দুর্বল। যখন বিরোধী দল শক্তিশালী থাকে, তখন গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ শক্তিশালী থাকে। আমাদের দেশে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সরকারের সঙ্গে সঙ্গে লাইন ধরে কিছু কিছু গণমাধ্যম ও নাগরিক সংগঠনবিরোধী দলের বিরুদ্ধে লেগে যান, এতে বিরোধী দলের সঙ্গে লেগে দেশের ভারসাম্য নষ্ট করছেন। এগুলোও সুশীল সমাজকে বুঝতে হবে।
সূত্র: যুগান্তর
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |