
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনে এমপি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলার তিন নেতা। তারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক চারবারের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক এম আউয়াল খান, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বেলজিয়াম বিএনপির সভাপতি সাইদুর রহমান লিটন।
এদিকে এ আসনে আলোচনায় আছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
ওয়ান ইলেভেনের পর ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে এ আসনটি হাতছাড়া হয় বিএনপির। স্বৈরশাসক হাসিনার পতনের পর আসন পুনরুদ্ধার ও এমপি হতে কাজ করে যাচ্ছেন এই চার নেতা।
তবে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জোট হলে পাল্টে যেতে পারে এ আসনের মনোনয়নের হিসাব-নিকাশ। এনসিপির হয়ে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
এদিকে গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, তার ছেলে ব্যারিস্টার রেজবিউল আহসান মুন্সী, এম আউয়াল খান, এএফএম তারেক মুন্সী ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেহানা পারভীনসহ ৫ নেতা ডাক পেলেও বাদ পড়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বেলজিয়াম বিএনপির সভাপতি সাইদুর রহমান লিটন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনটি ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপির দখলে ছিল। ওই সময় এ আসন থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি হন তিনি। এরপর থেকে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন মঞ্জু মুন্সী এবং এই আসনটি বিএনপির ঘাঁটিতে পরিণত করেন।
১/১১ এর পরে কয়েকটি মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করতে হয় এই বর্ষীয়ান বিএনপি নেতাকে। মামলা জটিলতার কারণে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মঞ্জু মুন্সী অংশ নিতে না পারলেও ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন তার সহধর্মিণী বেগম মাজেদা আহসান মুন্সী।
অপরদিকে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পান সাবেক মন্ত্রী ও সচিব এবিএম গোলাম মোস্তফা। ওই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর সুনিশ্চিত বিজয় ঠেকাতে কৌশলী প্রচারণায় নামেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই প্রচারণা চালানো হয় মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী গ্রেফতার। এমন সংবাদে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দিনভর এমন নাটকীয়তার পর বিকাল সাড়ে ৩টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেন মঞ্জু মুন্সীকে।
ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবিএম গোলাম মোস্তফা এবং বিএনপির হাতছাড়া হয় আসনটি। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধারের সুযোগ তৈরি হলেও বিএনপির ভুলে সেই সুযোগটিও হাতছাড়া হয়। সেই সময় বিএনপি জোটের মনোনয়ন পেয়ে মাঠে আসেন জেএসডি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন।
স্বৈরশাসক হাসিনার পতনের পর আসন পুনরুদ্ধার ও এমপি হতে মরিয়া হয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলার এই চার নেতা। তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ, সভা সমাবেশ, গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে ভোটার ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করে চলছেন। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে হাইকমান্ডের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক চারবারের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী ১/১১সহ স্বৈরাচার হাসিনার আমলে কয়েকবার মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করেন। বর্তমানে দলকে আরও শক্তিশালী করতে মঞ্জু মুন্সীর ছেলে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রেজবিউল আহসান মুন্সীও মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।
অপরদিকে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ও তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং রাজধানীর গুলশান থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এম আউয়াল খান ইতোমধ্যে তরুণ নেতা হিসেবে ভোটারদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছেন। স্বৈরাচার হাসিনাবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে সাতবার কারাবরণ করেন তিনি। গত ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান ও বনানী থানার তিন দণ্ডপ্রাপ্ত মামলায় আদলতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত এম আউয়াল খানসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ৮ নেতাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। চার দিন পর তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
এছাড়া কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সী নির্বাচনি মাঠে বেশ পরিচিত মুখ। তিনি এর আগে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থিত দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে এবং ২০২১ সালে বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এদিকে হঠাৎ করেই গত কয়েক মাস ধরে মাঠে নেমেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বেলজিয়াম বিএনপির সভাপতি সাইদুর রহমান লিটন, তিনিও বিভিন্ন সভা সমাবেশ করে এলাকায় পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করছেন।
কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সী জানান, আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম, বন্যায় ছিলাম, স্বৈরাচার পতন আন্দোলনেও ছিলাম। তাই দলীয় মনোনয়ন দাবি করতেই পারি। দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ও তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম আউয়াল খান বলেন, বিএনপি গণমানুষের দল। আগামী নির্বাচনে দলের পরীক্ষিত নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, দল মনোনয়ন দিলে এ আসন বিএনপিকে উপহার দেব ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক চারবারের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী বলেন, কুমিল্লা-৪ আসন বিএনপির ঘাটি; ৯১ সাল থেকে এই ঘাঁটি তৈরি হয়েছে। আসনটি বিএনপির ছিল, ইনশাআল্লাহ আগামী নির্বাচনেও এ আসন খালেদা জিয়া ও তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানকে উপহার দেব।
সূত্র : যুগান্তর












































