
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, সিটি করপোরেশন (কুসিক) ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৬ আসন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কুমিল্লার রাজনীতি মূলত এ আসন থেকেই নির্ধারিত হয় । এখানেই বিএনপির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন সাবেক কুসিক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।
কুমিল্লা-৬ আসন থেকে সর্বশেষ ২০০১ সালে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেন। তিনি এ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন । তার মৃত্যুর পর এ আসনের হাল ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন । তিনি গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন।
এদিকে ২০১২ ও ২০১৭ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন হওয়ার পর টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মনিরুল হক সাক্কু। এরপর ২০২২ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে তিনি ৫০ হাজার ৩১০ ভোট পেয়ে জয়ী হন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল ইসলাম সাক্কু পান ৪৯ হাজার ৯৭৬ ভোট। সাক্কুর চেয়ে ৩৪৩ ভোট বেশি পেয়ে কুসিক মেয়র নির্বাচিত হন রিফাত। অন্যদিকে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় বিএনপি মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারকে দল থেকে বহিষ্কার করে।
২০২৩ সালে আরফানুল হক রিফাত মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহারের কন্যা ডা. তাহসিন বাহার সুচি । মনিরুল হক হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার সে নির্বাচনেও অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
জানা গেছে, কুসিক নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কুকে পরাজিত করতেই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন তার শ্যালক কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারকে প্রার্থী করেছিলেন । এর ফলে সর্বশেষ দুটি কুসিক নির্বাচনে পরাজিত হন মনিরুল হক সাক্কু। এ ক্ষোভ থেকেই তিনি এখন হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াসিনের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ।
গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন পথসভায় মনিরুল হক সাক্কু আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন । আর না দিলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন । এমন ঘোষণায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব । তারা বলছেন, হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন ও মনিরুল হক সাক্কু উভিই নির্বাচন করলে কুমিল্লা-৬ আসনে জয়ী হবেন জামায়াতের প্রার্থী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল হক সাক্কুর ভাই কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য ও কুমিল্লা বারের পিপি কাইমুল হক রিঙ্কু দৈনিক আমার দেশকে বলেন, এটা সাক্কুর বিষয়। আমি বিএনপি করি । দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই থাকব। আমিও দল থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চাইব ।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। ফলে অনেকেই দল থেকে মনোনয়ন চাইতে পারে । দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তার পক্ষেই কাজ করব । গত ১৭ বছর কুমিল্লা নেতাকর্মীদের আন্দোলন সংগ্রাম, তাদের বিভিন্ন মামলা পরিচালনায় ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, কুমিল্লা সদর আসন (কুমিল্লা-৬) ধানের শীষের ঘাঁটি। এটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত । স্বাধীনতার পর বারবার এখান থেকে ধানের শীষ প্রতীকে এমপি হয়েছিলেন কর্নেল আকবর হোসেন । তিনি মারা যাওয়ার পর ২০০৮ ও ২০১৮ সালের ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছেন হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন । ৫ আগস্টের পর এখন ধানের শীষের প্রার্থীর সঙ্গে যেই আসুক না কেন, সে তুচ্ছ হিসেবে গণ্য হবে । অনেকে প্রার্থী হতে পারে, কিন্তু বিজয়ী হবেন হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিনই।
এদিকে এ প্রসঙ্গে কুসিকের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু দৈনিক আমার দেশকে বলেন, ২০২২ ও ২০২৪ ইয়াছিন সাহেব ওনার শ্যালককে দিয়ে আমাকে ফেল করিয়েছেন । তিনি এর জবাব দেবেন । আমি তো কখনো এমপি নির্বাচন করিনি । কিন্তু এখন ওনাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য দাঁড়াব। কুমিল্লার বিএনপি কি উনি করেছে? কুমিল্লার বিএনপি করেছেন আকবর হোসেন সাহেব। রাবেয়া আপা, বড় জাহাঙ্গীর ভাই, আলাউদ্দিন, আমির Ñএরা । আমরা করেছি কুমিল্লার বিএনপি ।
হাসিনার পা ধরে আপনি সালাম করেছিলেনÑএ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসিনা আমার বড়আপা । উনি আমার বোনের সঙ্গে ইডেন কলেজে একসঙ্গে লেখাপড়া করেছেন । এজন্য আমি ওনাকে আপা বলে ডাকি । তার বিয়ে হয়েছিল আমার বড় আপার বাসায়, চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে। উনি আমার প্রতি সিমপ্যাথি দেখিয়েছেন। এজন্য আমি তাকে পায়ে ধরে সালাম করেছি ।
সাক্কু আরো বলেন, তারেক রহমান সাহেব ২০০৩ সালে ফরিদপুর গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করেছিলেন । এটাই রাজনীতি, এটাই সামাজিক সৌজন্য । আমরা জিয়াউর রহমানের সৈনিক । আমরা কারো অবমূল্যায়ন করি না ।
এ ইস্যুতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন বলেন, সাক্কু সাহেব যেভাবে কথা বলছেন এভাবে আমি বলতে পারব না । উনি তো বিএনপির কেউ না । আমি দলের বাইরে কোনো কথা বলতে পারি না । আর উনি তো সরাসরি আমাকে কিছু বলেননি ।









































