প্রচ্ছদ জাতীয় বিএনপিতে মঞ্জু-বকুলের নয়া চমক

বিএনপিতে মঞ্জু-বকুলের নয়া চমক

খুলনা মহানগর বিএনপিতে প্রায় চার বছর ধরে চলা বিভক্তি অবসানের পথে। সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে অসন্তোষ দেখা দিলেও কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছেছেন স্থানীয় নেতারা।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে নগর বিএনপির সভাপতি পদ ও খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়ার পর থেকেই তার অনুসারীরা আলাদা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন। ঐ সময় প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে মহানগর বিএনপির নতুন নেতৃত্বে আসেন সভাপতি এসএম শফিকুল আলম মনা এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। ধীরে ধীরে থানা পর্যায়ের কমিটিতেও কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের অনুসারীরা নেতৃত্বদায়ী অবস্থানে আসেন।

নানা মতপার্থক্যের মধ্যেই ৩ নভেম্বর খুলনা-২ আসনে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে বিদ্যমান কমিটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। মনোনয়ন বঞ্চিত মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন প্রার্থী হতে আগ্রহী। তারা প্রচার-প্রচারণাও চালান। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন বৈঠক ও কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে, যা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিও জানানো হয়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও খুলনা-৩ আসনের মনোনীত প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার উদ্যোগে গত কয়েক দিনে পরপর কয়েক দফা বৈঠক হয়। ৯ নভেম্বর রাতে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বাসায় প্রথম বৈঠক হলেও সমাধান আসেনি। এরপর খুলনা ক্লাবে সোমবার ও মঙ্গলবার রাতে মঞ্জু, মহানগর বিএনপির সভাপতি-সম্পাদক এবং সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি মুখোমুখি বসেন। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন খুলনা-৫ আসনের প্রার্থী ও বিসিবির সাবেক সভাপতি আলী আজগর লবি। টানা আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত সব পক্ষ ঐক্যমতে পৌঁছান।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি নেতাদের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সন্তোষ প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি এসএম শফিকুল আলম মনা যুগান্তরকে বলেন, মঞ্জু ভাইয়ের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব ছিল, এখন আর নেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আগামী দিনে ধানের শীষকে জয়ী করতে আমরা সবাই মাঠে থাকব।

সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, রাজনীতিতে মান-অভিমান থাকতেই পারে। অতীত ভুলে আমরা এক হয়ে কাজ করছি। পদবঞ্চিত নেতাকর্মীসহ সবাইকে নিয়ে দুটি আসনে নির্বাচনি কার্যক্রম চালাব। শিগগিরই যৌথ সংবাদ সম্মেলন করব।

কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা বড় দলে থাকবেই, ভুল বোঝাবুঝিও হয়। সেসব আমরা আলোচনায় মিটিয়ে এক প্ল্যাটফর্মে এসেছি। জাতির ক্রান্তিকালে দলের স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ। আগেও বিএনপি ঐক্যবদ্ধ ছিল, এখনো আছে।

খুলনায় দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দূরত্ব পেরিয়ে নেতাদের এই নতুন সমঝোতা আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মাঠপর্যায়ের কর্মকাণ্ডে নতুন গতি আনবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।