
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান যে ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন তার মধ্যে সংস্কারের সবকিছুই বিদ্যমান রয়েছে। একটি দল অপপ্রচার চালাচ্ছে বিশেষ করে ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। তারা বলছে বিএনপি সংস্কার মানে না। আসলে বিএনপি সংস্কারের জন্মদাতা। সংস্কারের মধ্য দিয়েই বিএনপির জন্ম হয়েছে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের পতনের পরে যখন বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিলেন সেই দায়িত্ব পাওয়ার পরে তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি গতকাল শনিবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম ও হান্নান শাহর নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হান্নান শাহ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন।
স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন, হান্নান শাহর ছেলে গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা ড. এম এ কাইয়ুম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় নেতা মেয়র মজিবুর রহমান, ওমর ফারুক শাফিন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী, বিএনপি নেতা মমতাজ উদ্দিন রেনু প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, এক বছর আগে ভয়াবহ অপশক্তি জনতার প্রতিরোধে পালিয়ে গেছে। এখন মনে হচ্ছে আমরা স্বাধীন। হাসিনার শাসনামলে আমরা বাড়িতে থাকতে পারিনি, ঘরে ঘুমাতে পারতাম না,। একটা বিভীষিকাময় পরিবেশ ছিল। হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে মনে হচ্ছে আমরা নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছি।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। ড. ইউনূস সবার শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি নোবেল বিজয়ী। এ সরকার গঠনের উদ্দেশ্য ছিল তিনি নিরপেক্ষ উপদেষ্টাম-লী নিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন। আমাদের চাওয়া ছিল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করছেন। ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, বিধ্বস্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করেছেন, ব্যাংকের লুটপাট বন্ধ করেছেন। প্রশাসন ও বিচার বিভাগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন। সাত মাস ধরে সংস্কার কমিশন বৈঠক করছে। আরেকটি সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান চারটি পত্রিকা রেখে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আমাদের দাবি তো একটাই ১৫ বছর লড়াই করেছি গণতন্ত্রের বিজয়ের জন্য। দেশের মালিক জনগণ। জনগণের ভোটাধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। তার জন্য আমরা ত্যাগ স্বীকার কম করিনি। বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি ছিলেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান এখন পর্যন্ত বিদেশে অবস্থান করছেন ১৮ বছর ধরে।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনি শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবেন। আপনার উপদেষ্টাম-লীর সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ কোনো কোনো দলের জন্য পক্ষপাতিত্ব করছেন বলে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ আসছে। আমরা এটা শুনতে চাই না, বাংলাদেশের মানুষ এটা শুনতে চায় না। বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা চায় ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কেউ মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত হবেন না। চারদিক থেকে চেষ্টা হচ্ছে বিএনপিকে ঘায়েল করার জন্য।
তিনি বলেন, আর বিলম্ব নয়, আর কারও জন্য অপেক্ষা নয়, এখন নির্বাচনের রাস্তায় উঠে গেছে গাড়ি। এই গাড়িকে চালিয়ে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নারীদের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, তিনি মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় মহিলা সংস্থা গঠন করেছিলেন। তিনি নারীদের চাকরির সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রীদের লেখাপড়া দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে করেছিলেন। নারী শিক্ষা এগিয়ে যাওয়ার ফলে দেশে এখন উন্নয়ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, একটি দল ধর্মের কথা বলে অথচ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সংবিধানের প্রথমেই আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন লিপিবদ্ধ করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়েছিল। আজ দেশে ৩২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে। যার অবদান এই জনশক্তি রপ্তানি। মিল কারখানা তৈরি করে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফার মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১ কোটি বেকারের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের কৃষি-শিল্পসহ বিভিন্ন সেক্টরে পুনর্বাসন এবং চাকরি প্রদান করা হবে। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় মানুষ অনেক খুশি। কারণ দেশে এখন জনপ্রতিনিধি নেই। দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিরা দেশ চালালে সবার জন্য এর সুফল মিলবে।
তিনি আরও বলেন, হাসিনার সময়ে ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। লাখ লাখ মানুষকে নির্যাতন করা হয়েছিল। ইলিয়াস আলীসহ অসংখ্য মানুষকে গুম করা হয়েছিল।
আমরা ১৬ বছর গণতন্ত্রের জন্য ভোটের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লড়াই করেছি। বিএনপি একটি পরীক্ষিত রাজনৈতিক দল। মিথ্যা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। দেশে নির্বাচনী ট্রেন লাইনে উঠে গেছে। বিএনপির সব নেতাকর্মীর পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। একদিকে তরুণ একদিকে প্রবীণরা রয়েছেন আর বিলম্ব নয় ধানের শীষের পক্ষে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ঘরে ঘরে প্রচার-প্রচারণা শুরু করুন। যারা আমাদের ওপর নির্যাতন করেছে, তারা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ভারত আমাদের বন্ধু নয়, তারা সীমান্তে মানুষ হত্যা করছে, পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না। দুই দেশের মধ্যে যে সমস্ত চুক্তি রয়েছে তা রক্ষা করছে না। এমনকি আমাদের নির্বাচন নিয়েও তারা চক্রান্ত করছে। বন্ধুত্ব হতে হবে সমান সমান। পলাতক ফ্যাসিস্টরা যাতে অন্যের ওপর ভর করে ফিরে আসতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে এবং সর্বনাশ করেছে তারা যেন কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে না পারে সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। প্রয়াত হান্নান শাহর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ব্রিগেডিয়ার আসম হান্নান শাহর জনগণের প্রতি এবং দলের প্রতি অসীম ভালোবাসা ছিল। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সামনে রেখেই রাজনীতি করতেন। দলের চরম দুঃসময়ে তিনি বিএনপির হাল ধরেছিলেন। অনেক বার তাকে জেলে যেতে হয়েছিল এবং তিনি স্বৈরাচার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন অকৃত্রিম দেশপ্রেমিক।
সূত্র: DBC News