প্রচ্ছদ জাতীয় বাবা যাও তোমার সঙ্গে বেহেশতে দেখা হবে

বাবা যাও তোমার সঙ্গে বেহেশতে দেখা হবে

ঢাকার পুরান শহরের সরু গলি, মানুষের ভিড় আর আহাজারিতে আজও ভারী হয়ে আছে বংশালের কসাইটুলি। শুক্রবারের ভূমিকম্পে মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায় নুসরাত জাহান নিপার জীবন—মাথায় ইট পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তাঁর ছেলে, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফি। বয়স মাত্র ২৩। পাশে ছিলেন মা, তিনিও গুরুতর আহত হন।

শনিবার দুপুরে রাফির লাশ বগুড়ায় পৌঁছালে এলাকায় নেমে আসে গভীর শোক। শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাকে কয়েক মিনিটের জন্য ছেলের কফিনের সামনে আনা হলে চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে যায়। নিজের অবস্থা ভুলে নিপা ছেলের কফিন স্পর্শ করে বারবার কেঁদে ওঠেন। উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। কান্নার ভেতরই তিনি তাকিয়ে বলেছিলেন—“বাবা, যাও… তোমার সঙ্গে বেহেশতেই দেখা হবে।” সেই বাক্য যেন পুরো পরিবেশকে আরও ভারী করে তোলে।

বাদ জোহর বগুড়া শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা হয়। আগে ঢাকায় প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছিল। সহপাঠী, প্রতিবেশী, আত্মীয়—যে-ই এসেছে, সবাই বলছেন রাফির শান্ত, ভদ্র আর পরিশ্রমী স্বভাবের কথা। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন কতটা বড় ছিল, তা সবাই জানতেন।

রাফির চাচা আব্দুস সালাম রুবেল জানান, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের একটু পরেই তারা বাজারে ছিলেন। হঠাৎ দুলতে থাকা মাটি, মানুষের চিৎকার—সবকিছুই ঘটে যায় সেকেন্ডের ভেতর। পাশের পাঁচতলা ভবনের রেলিং ভেঙে মাথা ও বুকে পড়ে রাফির। স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে মা-ছেলেকে উদ্ধার করলেও রাফিকে বাঁচানো যায়নি। নিপা হাত, কাঁধ ও চোখে গুরুতর আঘাত পান।

খবর শুনেই বগুড়ার বাড়ি থেকে ঢাকায় রওনা দেন রাফির বাবা, অধ্যক্ষ ওসমান গণি রুস্তম। কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। সুত্রাপুরের ‘রমিছা ভিলায়’ অজস্র মানুষ ভিড় করতে থাকে—ছেলের সহপাঠী, বন্ধু, আত্মীয়, প্রতিবেশী—সবাই শোকে স্তব্ধ।

চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, নিপা শারীরিকভাবে এখন আর সংকটাপন্ন নন। তবে যে গভীর শোকের ভেতর তিনি ডুবে গেছেন, তা কাটিয়ে উঠতে পারবেন কি না সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিকেলে রাফিকে নামাজগড় আঞ্জুমান-ই গোরস্থানে দাদা ও চাচার কবরের পাশে দাফন করা হয়—এক তরুণের স্বপ্ন আর ভবিষ্যৎ চিরনিদ্রায় শায়িত হলো।

সূত্র : আরটিভি