দেশজুড়ে: ‘বাবার কাঁধে ছেলের লাশ, সন্তান হারানোর শোক; এটা পৃথিবীতে কেউ বুঝবে না। এর চেয়ে ভারী কোন কিছু আর নাই। একমাত্র যিনি সন্তানকে চিরতরে হারিয়েছেন, তিনিই শুধু সন্তান হারানোর কষ্ট বুঝতে পারবেন।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ ফারহান ফাইয়াজের পিতা শহীদুল ইসলাম ভুঁইয়া।
সম্প্রতি রাজধানীর শান্তিনগরের সার্কিট হাউজ রোডস্থ তার বাসায় সাংবাদিকদের জানান, তার ছেলের পুরো নাম মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভুঁইয়া। ডাক নাম রাতুল। ছাত্র—জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে সরকারি বাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের গুলিতে শহিদ হওয়ার পর ফারহান ফাইয়াজ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
গত ১৮ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের ধাওয়া—পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ শহিদ হন।
ফাইয়াজের বাবা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে ফারহান শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে পছন্দ করতো। যেখানে ঝগড়াঝাটি ও ঝামেলা থাকতো, তা থেকে এড়িয়ে চলতো। যে ছেলে সামান্য কষ্ট সহ্য করতে পারতো না, রোদ—বৃষ্টি হলে ছাতা ব্যবহার করতো, কখনো উবার কল করা না হলে লোকাল বাসে চড়ে কলেজে যাওয়ার যন্ত্রণা সহ্য করতে কষ্ট পেতো, সেই ছেলে কীভাবে এতোবড় আন্দোলনে যাবে? আমি চিন্তাই করতে পারি নাই!’
তিনি বলেন, ‘আজকালকার ছেলেদের ফেসবুক বা অন্য সামাজিক মাধ্যমে অবাধ বিচরণ, কেউ কেউ হয়তোবা তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। বন্ধুদের গ্রুপে ডাক পড়েছিল, কলেজের একজন শিক্ষকও আন্দোলনে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের আগস্ট মাসের বেতন ফ্রি করে দেওয়ার কথা বলেছিল। ফারহান কোটা সংস্কার আন্দোলনে এতোটাই জড়িয়ে যায় যে বাসায় তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া বোনকে পর্যন্ত বলেছিল,‘ অ্যাই ফারিন, তুমি আন্দোলনে যাচ্ছো না কেন? তোমার তো আন্দোলনে যাওয়া উচিত।’
তিনি আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ফারহান শিশুবয়সেই তার প্রখর মেধা আর বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছিল। অল্প পড়াতেই সব আয়ত্তে এসে যেতো। সে তার কলেজের পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি অন্য সবার চেয়ে প্রতিযোগিতায় নিজেকে একটু এগিয়ে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বইগুলোও পড়তো। তার পড়ার টেবিলে পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন লেখকদের বই সাজানো রয়েছে। ফারহানকে নিয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম।
শহীদুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, ফারহানের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে পদার্থবিদ হবে, দেশের বাইরে থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে মানুষের কল্যাণে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যেসব পাঠ্য ছিল, সেসব বই এখনই সে পড়তো। ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স নিয়ে ধারণা নিয়েছে। সে বলতো, তার কোয়ালিটি এপ্রুভ করার জন্য বুয়েটে অ্যাডমিশন পরীক্ষা দিয়ে তার কোয়ালিটি যাচাই—বাছাই করবে, তারপর ইউকে’তে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে যাবে। এটা তার ড্রিম প্রজেক্ট ছিল।
এ সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ফারহান পিৎজা, পাস্তা আর বার্গার খেতে খুব পছন্দ করতো। মৃত্যুর আগের রাতে ১৭ জুলাই অনলাইনে পিৎজা অর্ডার করেছিল। আমি দরজা খুলে সেটা গ্রহণ করি এবং ওর হাতে দেই। খাবার খেয়ে রাত দশটা বা সাড়ে দশটা নাগাদ শুতে চলে যায়। আর কথা হয়নি, বাবাটার সাথে আবার। অনেক ব্যথা অনেক কষ্ট আমাদের। দেশের জন্য আমাদের একমাত্র ছেলে শহিদ হয়েছে। তার ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশটা নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। এটা একদিকে আমাদের জন্য যেমন সান্ত্বনার, তেমনি বেদনারও।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |