প্রচ্ছদ খেলাধুলা বাফুফের স্টাফদের পকেটে বোনাস, কিন্তু ঈদেও বেতন পাননি সাবিনারা

বাফুফের স্টাফদের পকেটে বোনাস, কিন্তু ঈদেও বেতন পাননি সাবিনারা

রাত পোহালেই সারাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। এই আনন্দে প্রিয়জনদের কাছে ফিরছে নানা পেশার মানুষ। বাংলাদেশ নারী ফুটবলারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এমন আনন্দঘন মুহূর্তেও নারী ফুটবলারদের মনে খুশির ঝিলিক নেই। কারণ, বোনাস তো দূরের কথা এখনও পর্যন্ত তাদের বকেয়া বেতনও পরিশোধ করেনি বাফুফে।

ঈদ কাটাতে গেছেন নিজ জেলা সাতক্ষীরায় গেছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। সেখান থেকে দেশের বেসরকারি একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেতন না দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাবিনা।

তিনি বলেন, মেয়েরা আমাকে প্রতিনিয়ত এ নিয়ে কথা বলছে। আমি ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসার আগে ফেডারেশনকে বলেছিলাম দ্রুত দেওয়ার জন্য। এসেও মেসেজ দিয়েছি, কোনো রিপ্লাই পাইনি। ঈদের আগে এমন অবস্থা খুবই হতাশার।’

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অন্যতম সিনিয়র খেলোয়াড় মারিয়া মান্ডা। তিনি অমুসলিম হলেও সতীর্থদের প্রতি তার গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ঈদ নিয়ে সবারই একটা পরিকল্পনা থাকে, আবার অনেকের পরিবার আমাদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাদের জন্য বিষয়টি অনেক কষ্টের।

সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও সাবিনাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন-বিদ্রোহ করতে হয়েছে। অনেক সংগ্রাম ও চাপের পর মেয়েদের সঙ্গে আগস্ট মাসে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে বাফুফে। ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন চুক্তির দিন বলেছিলেন, এখন থেকে সবকিছু পেশাদারভাবে হবে।

কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি। প্রথম চুক্তির ছয় মাসে প্রতিবারই বেতন বকেয়া রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে সেই ছয় মাস শেষ হওয়ার পর চুক্তি নবায়নের সময় সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেছিলেন, মেয়েরা এখন ফিফা ফান্ডের আওতায় আসছে, আর বিলম্ব হবে না।

অথচ নতুন চুক্তিতে আরও বিড়ম্বনা বেড়েছে। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও ফিফার ফান্ড থেকে মেয়েদের বেতনের বিষয়টি বাফুফে এখনও অনুমোদন পায়নি। তাই মেয়েদের বেতন দিতে পারছে না বাফুফে।

এ নিয়ে ইমরান হোসেন বলেন, আমরা মেয়েদের গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে বেতন নির্ধারণ করেছি, ফিফা সেটা মূল্যায়ন করছে। ফিফা এখনও তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি। ফিফার অনুমতি ছাড়া ফান্ডের অর্থ প্রদান করা যাবে না।

‘আমরা শুক্রবারও ফিফার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমাদের ব্যাংকে নির্দেশনা ছিল, ফিফার সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নারী ফুটবলারদের অর্থ তাদের অ্যাকাউন্টে চলে যেত।’

বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। তিনি ফিফার সাবেক নির্বাহী সদস্য ও এএফসির নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচরণ করা একজন কর্মকর্তা থাকতে সাবিনাদের বিষয়টি এসপার-ওসপার হতে তিন মাসের অপেক্ষা অত্যন্ত হতাশাজনক।

বাফুফের নিজস্ব তহবিল সংকট ও তহবিলের অর্থ খরচে ফিফা-এএফসির নানা নির্দেশনা থাকে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদসহ আরও অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে বেশ বিত্তবান।

মেয়েদের এক মাসের বেতন সর্বসাকুল্যে ১২-১৫ লাখ টাকা। ঈদের আগে অন্তত এক মাসের এই অর্থ বাফুফের অনেক কর্মকর্তা একাই দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। সামর্থ্য থাকলেও মানসিকতার নিদর্শন রাখা অবশ্য কঠিন। সেই কঠিন নজিরই স্থাপন করেছেন তারা।

ঈদের আগে কেউ নারী ফুটবলারদের সংকটে পাশে দাঁড়াননি। নিজেরা অপেশাদার ও অমানবিক আচরণ করলেও, এক বছরের বেশি সময় ইনজুরিতে ভুগে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ায় কৃষ্ণা রাণী সরকারকে শোকজের হুঙ্কার ঠিকই দিয়েছিলেন নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান। পরে অবশ্য মিডিয়া ও ফুটবলপ্রেমীদের সমালোচনায় সেই পথে হাঁটার সাহস পায়নি বাফুফে।

ফুটবলাররা বকেয়া বেতন না পেলেও ফেডারেশনের স্টাফরা বেতন এবং বোনাস বুঝে পেয়েছেন গত ২৮ মে। ইতোমধ্যে কোরবানির প্রস্তুতি ও অনেক আয়েশে ঈদের ছুটি কাটালেও নারী ফুটবলার ও রেফারিদের ঈদ কষ্টের।

এই বিষয়ে স্টাফদের পক্ষ নিয়ে সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ফুটবল ফেডারেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ফিফা ও এএফসির অনুদান। তাদের অর্থ প্রশাসনিক খাতে ব্যয় করার নির্দেশনা রয়েছে। প্রশাসনিক খাতে ফান্ড আছে, তাই স্টাফরা নিয়মিত বেতন-বোনাস পায়।