
ইচ্ছা কিংবা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ পাপকাজে জড়িয়ে যায়। মুমিনের উচিত সর্বাবস্থায় পাপ বা গুনাহের কাজ থেকে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা। এ ক্ষেত্রে গুনাহ মাফের অন্যতম উপায় হলো কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যদি সেসব কবিরা গুনাহ পরিহার করো, যা থেকে তোমাদের বারণ করা হয়েছে, তাহলে আমি তোমাদের গুনাহসমূহ (সগিরা গুনাহ) ক্ষমা করে দেবো এবং তোমাদের প্রবেশ করাবো সম্মানজনক প্রবেশস্থলে।‘ (সুরা নিসা, আয়াত ৩১)
এ ক্ষেত্রে কবিরা গুনাহের অন্যতম হলো শিরক করা (আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও উপাসনা করা)। হাদিসে এসেছে, আবু বকর (রা.) থেকে মুসাদ্দদ (রহ.) বর্ণনা করেন, একদিন রাসুলুল্লাহু (সা.) তিনবার বললেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহগুলো সম্পর্কে অবহিত করবো না? সকলে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! (সা.) অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, সেগুলো হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। ওই সময় রাসুল (সা.) হেলান দিয়ে বসেছিলেন, তারপর সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, জেনে রাখো, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, এ কথাটি তিনি বার বার বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, আর যদি তিনি না বলতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪৭৮)
মনে রাখতে হবে, আল্লাহর সঙ্গে শিরককারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা অবশ্যই কুফরি করেছে যারা বলে, মারইয়াম পুত্র মাসীহই হচ্ছেন আল্লাহ। মাসীহ তো বলেছিল, হে বনি ইসরাঈল! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো যিনি আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশীস্থাপন করে তার জন্য আল্লাহ অবশ্যই জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন, আর তার আবাস হলো জাহান্নাম। জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।‘ (সুরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২) অপর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সঙ্গে কাউকে শরীক করা ক্ষমা করবেন না। এটি ছাড়া অন্য সব পাপ ক্ষমা করেন যেগুলো তিনি চান। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করলো, সে এক মহাঅপবাদ আরোপ করলো। (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৮)
তবে জেনে না জেনে অনেকেই কবিরা গুনাহের মতো বড় পাপ করে ফেলেন। উদাহরণ স্বরূপ, আল্লাহ ছাড়া কারও নামে কসম কাটা হারাম। কিন্তু অনেকেই কথায় কথায় বাবা-মা কিংবা অন্য কারও নামে কসম কেটে থাকেন, যা মূলত কবিরা গুনাহ। হাদিসে এসেছে, সাদ ইবনু উবায়দা (রহ.) বলেন, ইবনু ওমার (রা.) জনৈক ব্যক্তিকে’ ‘না কাবার কসম‘ এমনটি বলতে শুনলেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কসম করা যায় না। কেননা, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কসম করলো, সে কুফরি করলো বা শিরকী করলো। (তিরমিজী, হাদিস: ১৫৪১)
অপর হাদিসে এসেছে, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি আল্লাহর সম্মুখে হাজির হবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তার সম্মুখে উপস্থিত হবে এমন অবস্থায় যে, সে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৭২) সুতরাং, মুমিনের যেমন সঠিক পথে থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি ঈমান-আমলের ওপর অবিচল থাকা জরুরি, তেমনি নিজেকে শিরকের মতো কবিরা থেকে বাঁচিয়ে রাখাও জরুরি।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |