
বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট পরিচালনা ও অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি ও প্রচারের অভিযোগে বান্দরবন থেকে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে সিআইডি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তার দম্পতি বিদেশি একটি ওয়েবসাইটে নিয়মিত পর্নো কনটেন্ট আপলোড করতেন। তাদের পরিচালিত চ্যানেলটি বিশ্বের জনপ্রিয় পর্নো সাইটগুলোর মধ্যে অন্যতম স্থানে উঠে আসে। শুধু নিজেরা কনটেন্ট তৈরি করাই নয়, তারা অন্য বাংলাদেশিদেরও এই কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, এই দম্পতি নিয়মিতভাবে বিদেশি পর্নো প্ল্যাটফর্মে ভিডিও আপলোড করতেন। এছাড়া নতুনদের যুক্ত করলে ওয়েবসাইটগুলো থেকে তারা মুনাফা পেতেন।
তিনি জানান, সোমবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে বান্দরবান জেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে ওই যুগলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল, সিমকার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ পর্ন ভিডিও তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। এই পর্ন-তারকা যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও বৃষ্টি (২৮)।
জসীম উদ্দিন খান আরো জানান, ওই যুগল শুধু নিজেরাই পর্ন ভিডিও তৈরি করা নয় বরং আরও মানুষদের এ জগতে সম্পৃক্ত করার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই যুগলকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এসব প্রকাশিত তথ্যেই উঠে আসে তারা মাত্র এক বছরেই পর্ন-তারকাদের আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে রয়েছেন এবং ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পারফর্মারদের মধ্যে তাদের অবস্থান অষ্টম।
তিনি আরো জানান, ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরমে তাদের প্রথম ভিডিও প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে এক বছরে তাদের প্রকাশিত মোট ১১২টি ভিডিও ২ কোটি ৬৭ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে।
তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, একাধিক আন্তর্জাতিক পর্ন ওয়েবসাইটে তারা ভিডিও আপলোড করতেন।
এভাবে খোলাখুলি প্রচারণার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রাম, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেও তারা প্রচারণা চালাতেন। এসব প্রচারণায় ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হওয়ার জন্য অন্যদের প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন বার্তা প্রকাশ করতেন তারা। আগ্রহীরা নতুন ক্রিয়েটর হওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে টেলিগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে নতুনদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করাও ছিল তাদের কাজ। যেমন টেলিগ্রাম চ্যানেলে নতুন ক্রিয়েটর অ্যাড করলে নগদ অর্থ দেওয়া হবে বলে তারা বিজ্ঞাপন দিতেন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে না পারা এ যুগল দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এলেও অনলাইনে রয়েছে তাদের বিলাসবহুল জীবনধারার বহু ছবি।
বিষয়টি সামাজিক ও নৈতিকভাবে উদ্বেগজনক এবং একই সাথে বেআইনি হওয়ায় সিআইডির এলআইসি এবং সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিট দ্রুততার সঙ্গে এই পর্ন-তারকা যুগলকে গ্রেপ্তার করে।
তিনি আরো জানান, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে আদালতে সোপর্দ করা ও রিমান্ডের আবেদনসহ পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
সিআইডি বলছে, এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশে বসে পর্নো কনটেন্ট তৈরির একটি সংগঠিত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অনুযায়ী, পর্নোগ্রাফি তৈরি, বিতরণ বা সংরক্ষণ করা একটি ফৌজদারি অপরাধ। এ অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
আইনি এই নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, দম্পতিটি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের পরিচিত পর্নো তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন—যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরের বাইরে ছিল।
সম্প্রতি ঢাকাভিত্তিক একটি অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম দ্য ডিসেন্ট তাদের কার্যক্রমের তথ্য প্রকাশ করলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।