বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। গত ৩০ মে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৭৫ পয়সা এবং পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে আড়াই টাকা করে।
এতে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য দাঁড়ায় লিটারে ১০৭ টাকা ৭৫ পয়সা। আর পেট্রোল ও অকটেনের দাম হয় লিটার প্রতি যথাক্রমে ১২৭ ও ১৩১ টাকা।
অন্যদিকে গত ৪ জুন বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি প্রাইস’ (দ্রব্য মূল্য) সংক্রান্ত প্রতিবেদন বলছে, মে মাসের শুরুতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে প্রায় ছয় ডলার করে হ্রাস পেয়েছে।
জ্বালানিতে ভর্তুকি প্রথা থেকে বের হয়ে আসার জন্য মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ‘দাম সমন্বয়’ শুরু করে সরকার। এ পর্যন্ত মোট চার বার মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে দুই দফা দাম কমেছে। আবার দুই দফায় বেড়েছেও। কিন্তু এতে করে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সাদৃশ্য দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) থেকে জানা যায়, প্রায় সব ধরনের জ্বালানি নিয়ে কারবার করলেও করপোরেশনের মূল ব্যবসা ডিজেলের।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, ডিজেলের দাম ৭৫ পয়সা বাড়িয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। উল্টো আগের মুনাফা থেকে ৫১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।
তার দাবি, বিশ্ববাজারে কমার পরেও দেশে জ্বালানি তেলে মূল্য না কমার পেছনে ডলারের ক্রলিং পেগ (নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ডলারের বিনিময় হার ওঠা নামা) পদ্ধতিই দায়ী।
Advertisement
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কিছুটা কমেছে স্বীকার করে তিনি বলেন, সমন্বয় করেও ভোক্তা পর্যায়ে রিফ্লেকশন পড়েনি, কারণ এই সময়ে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যমান পাল্টে গেছে। ১১০ টাকা করে এলসি খুলেছি, কিন্তু পেমেন্ট করতে হচ্ছে ১১৭ টাকায়। ডিজেলের দাম সাত টাকা বাড়ালে ডিজেলের বিপণন ব্রেক ইভেনে (আয়-ব্যয় সমান) থাকতো।
তিনি বলেন, অন্তত পাঁচ শতাংশ লাভ থাকলে ব্যবসা সাসটেইনেবল (টেকসই) হয়। ব্রেক ইভেনে থাকলে তো সাসটেইনেবিলিটি থাকে না। গত মাসে আমাদের জিরো মার্জিন ছিল।
বিপিসি চেয়ারম্যান জানান, জাহাজ ভাড়া আপাতত স্থিতিশীল আছে। বাজার মূল্য যদি কমতে থাকে, আগামী মাসের মূল্য সমন্বয়ের পর অল্প হলেও রিফ্লেকশন (প্রতিফলন) দেখা যাবে বলে আমি আশাবাদী। আগে জ্বালানি তেলে সরকার ভর্তুকি দিতো।
আইএমএফের সাম্প্রতিক শর্তের কারণে জ্বালানিতে আর ভর্তুকি না দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে মো. আমিন উল আহসান বলেন, দাম আরো কমাতে গেলে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হতো। কিন্তু নীতিগত কারণে সেটা সম্ভব নয়। ফলে, জুলাই মাসের মূল্য সমন্বয়ের দিকেই চোখ রাখতে হবে ভোক্তাদের।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, প্রত্যেক মাসে সমন্বয় করাটাকে সমর্থন করি না। জ্বালানি তেলের দরের সাথে পরিবহন ব্যয়সহ উৎপাদন খাতের ব্যয়ও জড়িত।
তিনি বলেন, সবকিছুতে একইসঙ্গে অ্যাডজাস্টমেন্ট সম্ভব হয় না। যখন তেলের দাম বাড়ে, তখন সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু যখন তেলের দাম কমে, তখন আর সবকিছুর দাম কমায় না।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, বিপিসি এমন একটি অস্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান, তাদের কোনো কথা বিশ্বাস করা কঠিন। কীভাবে করা হচ্ছে, কত দাম ধরা হচ্ছে সেটা আমরা জানি না। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার ফর্মুলা দেয়া হয়েছে, সেই কাজটা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) করতে পারে।
