প্রচ্ছদ আন্তর্জাতিক বাংলাদেশের লাগাম হারাচ্ছে ভারত, আঞ্চলিক রাজনীতির নতুন মোড়

বাংলাদেশের লাগাম হারাচ্ছে ভারত, আঞ্চলিক রাজনীতির নতুন মোড়

জাতীয়: ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। আর শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব কমছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দ্য গার্ডিয়ানে হান্না এলিস-পিটারসনের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং বিরোধী দল কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত আঞ্চলিক মিত্র হতে পেরেছিল। অন্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ থাকলেও শেখ হাসিনার কারণে বাংলাদেশ ছিল তাদের বিশ্বস্ত সঙ্গী। পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীন ব্যাপকভাবে অন্য দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তার করলেও বাংলাদেশে তা সম্ভব হয়নি।

এ অবস্থায় গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনে অনেক হিসাব-নিকাশ উল্টে গেছে। এ বিষয়ে ‘শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ানে’ একটি নিবন্ধ লিখেছেন সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস, বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি মালয়েশিয়ার টেলরস ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসরও।

ওই নিবন্ধে অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ লেখেন— বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এ অবস্থায় ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে কীভাবে নেভিগেট করে তা প্রকাশের জন্য আগামী তিন থেকে ছয় মাস হবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাংলাদেশে প্রভাব কমছে ভারতের এবং ঢাকার সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক কোন দিকে যাবে সেই বলও এখন রয়েছে নয়াদিল্লির কোর্টে।

গত বৃহস্পতিবার ভারতের উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে তিন বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের যৌথ সম্মেলনে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, ভারত শান্তিপ্রিয় দেশ। শান্তি রক্ষার জন্য ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বক্তব্যে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে বলতে গিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও হামাস-ইসরায়েল প্রসঙ্গ টেনেছেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত পরিস্থিতির ওপরও নজর রাখতে বলেছেন।

এ বিষয়ে ড. ইমতিয়াজ আহমেদের নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি যা বলেছেন তার পেছনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সম্ভবত অবদান রেখেছে। প্রথমত, তিনি ঘরোয়া নির্বাচনী এলাকায় ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন এবং ভারতীয় জনগণকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন- ‘ভারতকে অপ্রত্যাশিত কিছু মোকাবিলা করতে হবে।’ তার এই ‘অপ্রত্যাশিত’ শব্দটি থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে- তিনি মূলত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পট-পরিবর্তনকে বোঝাতে চেয়েছেন, যেটাকে ভারতের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মূলত ভারতের মিডিয়া এবং কিছু নীতিনির্ধারক গত ৫ আগস্টের পর তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছে।

নিবন্ধে লেখক আরও বলেছেন, তিনি নিশ্চিত, ভারতের বেশিরভাগ অংশ অবশ্যই এ ঘটনায় পুরোপুরি হতবাক হয়েছে, কারণ গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে ভারত বলে আসছিল— বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো। এখন এখানে যে পয়েন্টটি অনুপস্থিত তা হলো : ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ছিল না; ছিল একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে। আর সেটাই ব্যর্থ হয়েছে। ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, তিনি নিশ্চিত তারা অর্থাৎ ভারত এখন বুঝতে পেরেছে, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক না করে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা অনেক ভালো।

দ্বিতীয় কারণটি হলো- বহুমুখী বিশ্বে ভারত অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে তার অবস্থান অর্জন করতে চায়। দেশটির অর্থনীতি আয়তনের দিক থেকে ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে ছাড়িয়ে গেছে।

আর তৃতীয় কারণটি হলো- বাংলাদেশকে স্বাভাবিকভাবে না নেওয়া, যেমনটি ভারত নিয়েছিল আওয়ামী লীগের শাসনামলে। তাই ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন সে বার্তাটি ভারতীয় শ্রেণিবিন্যাস এবং স্টেকহোল্ডারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিশেষ করে যখন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করাসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যেই উল্লেখ করেছেন। এর আগে তিনি অর্থাৎ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে বিশেষ বক্তব্যও দিয়েছেন। ড. ইমতিয়াজ আহমেদ তার নিবন্ধে আরও বলেছেন- নয়াদিল্লি নিঃসন্দেহে নিশ্চিত যে- বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার থেকে ভিন্ন। সুতরাং, তাদের সঙ্গে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।