সারাবিশ্ব: বাংলাদেশে পোশাকশ্রমিকরা শ্রম অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও বিচার পাচ্ছেন না। তদুপরি ভয় ও নিপীড়নের পরিবেশে থেকে কাজ করতে হচ্ছে। এমনটি বলছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বুধবার (১ মে) আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব দাবি করে সংস্থাটি। সেখানে রানা প্লাজা ধস, আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে শ্রমিকদের প্রাণহানিসহ বেশ কয়েকটি প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়। এ ছাড়া কয়েকজন শ্রমিক নেতার বক্তব্য সংযুক্ত করে দেশে চলমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত করা হয়। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, কারখানাগুলো একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘন করলেও তারা দায়মুক্ত থাকছে। রানা প্লাজা ধস, আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে শ্রমিকদের প্রাণহানির বিষয়টি উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে। সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল রানা প্লাজা ধস। এ ঘটনায় ১ হাজার ১০০ জনের বেশি পোশাকশ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়ে কষ্টে দিন পার করছেন বহু শ্রমিক। ওই ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্ণ হলেও শ্রমিকরা প্রকৃত ক্ষতিপূরণ পায়নি। তেমনি তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে ১১২ জন নিহত হন। এসব প্রাণহানি কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে হয়েছে। যা ব্যবসাসংশ্লিষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ।
এ দুই ঘটনায় ক্ষতিপূরণের মামলা করেছিল বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও অন্যান্য এনজিও। কিন্তু তার সঠিক সুরাহা হয়নি বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। এদিকে পোশাক শ্রমিকরা যখন নিজেদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করে তখন তাদের দমন-পীড়ন করা হয়। গত বছর মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে শক্তি প্রয়োগ করে স্থানীয় প্রশাসন। তারা অনেককে গ্রেপ্তার করে। প্রতিবেদনে নিপীড়নের মাত্রা বোঝাতে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের (বিজিআইডব্লিউএফ) গাজীপুর শাখার সভাপতি শহিদুল ইসলাম নিহতের ঘটনা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, পোশাকশ্রমিকদের বকেয়া বেতন আদায়ের চেষ্টা করলে হামলায় তিনি নিহত হন। একই বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলনের সময় আরও অন্তত চারজন পোশাকশ্রমিক নিহত হন। অ্যামনেস্টির হিসাবে, ২০২৩ সালের আন্দোলনের পর থেকে পোশাকশ্রমিকদের বিরুদ্ধে অন্তত ৩৫টি মামলা করা হয়েছে। এতে ১৬১ পোশাকশ্রমিকসহ ৩৫ হাজার ৯০০ থেকে ৪৪ হাজার ৪৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। ৩৫টি মামলার মধ্যে ২৫টি এমন সব পোশাক কারখানা করেছে, যেগুলো বিশ্বের বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করে।
এসব মামলায় অন্তত ১৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রধান ট্রেড ইউনিয়নের নেতা রয়েছেন। বেশিরভাগই জামিনে মুক্তি পেলেও ট্রেড ইউনিয়ন নেতা আমজাদ হোসেন জুয়েলসহ বেশ কয়েকজনের বারবার জামিন নাকচ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, অবৈধ সমাবেশ, আঘাত, দাঙ্গা সৃষ্টি, কারখানা প্রাঙ্গণে অবৈধ প্রবেশ এবং সম্পত্তির ক্ষতির অভিযোগ করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের একজন শ্রমিক আমিন হকের সঙ্গে কথা বলে। তিনি সংস্থাটিকে জানান, বছরের পর বছর প্রতিবাদী শ্রমিকদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়। তা করতে ব্যর্থ হলে জামিন বাতিল হতে পারে। মামলার জটিলতায় মজুরি হ্রাসের পাশাপাশি তাদের চাকরিও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এতে তাদের আর্থিক প্রভাবগুলো ব্যাপক। এ পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত, তাদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ, মতপ্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতা করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় অ্যামনেস্টি।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |