প্রচ্ছদ জাতীয় ফ্যাক্ট চেক : শেখ হাসিনা কি আসলেই হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেছেন?

ফ্যাক্ট চেক : শেখ হাসিনা কি আসলেই হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেছেন?

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপালে সিঁদুর পরে ভারতে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। তবে আসলেই তিনি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন কি না, সেই বিষয়ে ফ্যাক্ট চেক করেছে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ভারতীয় ফ্যাক্ট চেক সংস্থা লজিক্যালি ফ্যাক্টস।

 ছবিতে কী দাবি করা হয়েছে?
ভাইরাল ছবিটিতে দেখা যায়, একদল লোকের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে দেখা যায়, গেরুয়া পোশাক পরিহিত একজন হিন্দু পুরোহিত ভারতে তার কপালে তিলক এঁকে দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে তিনি হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে বাংলায় লিখেছেন, ‘‘হায়রে বুবু যখন বাংলায় মুসলমান এবং হিন্দুস্তানে হিন্দু।’’ এই ধরনের দাবিতে করা পোস্ট ফেসবুক এবং এক্সের আর্কাইভ ভার্সনে দেখা যাবে এখানে, এখানে এবং এখানে।

তবে ছবিটির ফ্যাক্ট চেক করে দেখা যায়, শেখ হাসিনার হিন্দু ধর্ম গ্রহণের দাবিতে ভাইরাল ছবিটি এডিট করা হয়েছে। এই ছবির মূল ছবিটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের। যেখানে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীর কেরালা সফরের সময় তার কপালে তিলক এঁকে দেন হিন্দু পুরোহিত। সেই ছবি এডিট করে রাহুল গান্ধীর জায়গায় শেখ হাসিনাকে বসানো হয়েছে।

• অনুসন্ধানে যা পাওয়া যায়
রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের একটি পোস্ট পাওয়া যায়। এএনআইয়ের আর্কাইভ পোস্ট দেখা যাবে এখানে। এক্সে দেওয়া ওই পোস্টে এএনআই হিন্দু পরোহিতের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রাহুল গান্ধীর সাক্ষাতের চারটি ছবি যুক্ত করে দিয়েছিল।

সেই ছবিতে রাহুল গান্ধীর কপালে হিন্দু পুরোহিতকে তিলক এঁকে দিতে দেখা যায়। মূলত এই ছবিটিই এডিট করে রাহুল গান্ধীর স্থানে শেখ হাসিনাকে বসিয়ে দেওয়া হয়। ছবিতে রাহুলের জায়গায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্যান্য সব দৃশ্য অপরিবর্তিত রয়েছে।

ওই চারটি ছবি পোস্ট করে এএনআই লিখেছে, কংগ্রেস দলীয় সংসদ সদস্য রাহুল গান্ধী তিরুবনন্তপুরমেরনারায়ণ গুরুর সমাধিতে প্রণাম জানাতে ভারকালার শিবগিরি মঠ পরিদর্শন করেছেন। ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসও এসব ছবি তাদের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করেছে। এক্সে দেওয়া কংগ্রেসের সেই পোস্ট দেখুন এখানে।

ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ দেশটির কয়েকটি সংবাদমাধ্যমও ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাহুল গান্ধীর ভারকালার শিবগিরি মঠ পরিদর্শন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কংগ্রেসের ভারত জোড়া যাত্রার অষ্টম দিনের কর্মসূচি শুরু করার আগে দেশটির আধ্যাত্মিক নেতা ও সমাজ সংস্কারক নারায়ণ গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেরালার তিরুবনন্তপুরমের নাভাইক্কুলাম থেকে শিবগিরি মঠ পরিদর্শনে যান রাহুল।

• শেখ হাসিনার ছবির নেপথ্যে কী?
রাহুলের ছবির জায়গায় ব্যবহার করা শেখ হাসিনার ছবিটি ২০১৯ সালের অক্টোবরের। হংকং-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এশিয়া টাইমসের ২০২৩ সালের ১৬ জুলাইয়ের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছবিটি ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের আগ মুহূর্তে তোলা হয়। শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির করমর্দনের ছবিটি তুলেছিলেন ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিনিধি প্রকাশ সিং।

ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভাইরাল ছবিটি ক্রপ করার পর রাহুলের জায়গায় বসানোর জন্য উল্টে দেওয়া হয়েছে। মূল ছবিটি এএফপিতেও পাওয়া যাচ্ছে। ছবিটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন…

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভারতে চার দিনের সরকারি সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছিলেন শেখ হাসিনা।

এতে বিষয়টি চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে যে, কেরালায় ধর্মীয় স্থান পরিদর্শন করা রাহুল গান্ধীর ছবি এডিট করে সেখানে শেখ হাসিনার ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মিথ্যা দাবি করা হয়েছে, ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী তার কপালে তিলক লাগিয়েছেন।

• দাবিটি কি সত্য?
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে তিলক লাগাচ্ছেন বলে মিথ্যা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা একটি সম্পাদিত ছবি শেয়ার করেছেন। মূল ছবিতে দেখা যায়, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কেরালার মঠ পরিদর্শন করছেন। এ সময় তার কপালে তিল এঁকে দেন মন্দিরের পুরোহিত। সেই ছবিটি ক্রপ করে রাহুলের জায়গায় শেখ হাসিনাকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার কপালে তিলক এঁকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণের দাবিটি মিথ্যা।

 

সুুত্রঃ ঢাকাপোস্ট

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।