প্রচ্ছদ আইন আদালত ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিরা পারবেন স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাতে

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিরা পারবেন স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাতে

জাতীয়: কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের রাখা হয় বিশেষ একটি কক্ষে। যাকে বলা হয় কনডেম সেল। ৬ ফিট বাই ৬ফিট ঘরে থাকে না পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। সার্বক্ষণিক পাহারায় ২৩ ঘণ্টা অন্ধকার কক্ষেই মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয় বন্দিদের। এ যেনো মৃত্যুর আগে আরেক মৃত্যুযন্ত্রণা!

দেশের ৬৮টি কারাগারে এরকম নারী-পুরুষ বন্দির সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। যাদের অধিকাংশই খালাস চেয়ে আপিল করে রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালতে। অথচ এ আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে হতে কেটে যায় ১৫ থেকে ২০ বছর। অনেকে খালাস পান, অনেককে ঝুলতে হয় ফাঁসির কাষ্ঠে।

সোমবার (১৩ মে) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের শুনানি নিয়ে আদেশে বলেন, হাইকোর্ট তার রায়ে বলছেন, আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে কাউকে ফাঁসির আসামি বলা যাবে না। রাখা যাবে না নির্জন কক্ষে। ২ বছরের মধ্যে কনডেম সেলে থাকা সব বন্দিদের সাধারণ সেলে নেয়ার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত।

তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে শর্তসাপেক্ষে তাকে আলাদা রাখা যাবে। সুযোগ পাবেন জামিন চেয়ে আবেদন করার। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ভারতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিরা চাইলে স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন।

রায়ে উঠে আসে সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনী হত্যা প্রসঙ্গ। হাইকোর্ট বললেন, একযুগেও তদন্ত শেষ না হওয়া বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিরা কনডেম সেলে নাকি সাধারণ সেলে থাকবে সে সিদ্ধান্ত আসা উচিৎ সর্বোচ্চ আদালত থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়, ২০ বছরের অধিক সময় কনডেম সেলে থাকা অনেক আসামি সর্বোচ্চ আদালতে এসে নিরপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি হবে না এবং কেন জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

এরপর ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর রুলের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে অপেক্ষমান ছিল। এর আগে মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করা হয়। চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন।