
রাজধানীর কুড়িল এলাকায় রেললাইনে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুলের ছবি তোলার সময় ইসতিয়াক আহমেদ রাফিদ নামে এক ফটোগ্রাফারের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২ মে) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। ছবি তোলার সময় দ্রুতগতির একটি ট্রেন হঠাৎ চলে আসায় ঘটনাস্থলেই কাটা পড়ে মারা যান তিনি।
অনেকেই বলছেন ট্রেন আসার ভিডিও করতে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে ইসতিয়াকের। কিন্তু তার দুর্ঘটনার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ট্রেন আসার বিষয়টি খেয়াল করতে পারেননি ইসতিয়াক। সে সময় ট্রেনের গতি ঠাওর করতে না পারায় দ্রুতগতির ট্রেনটি চাপা দেয় তাকে। আর ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
এদিকে ভিডিওর পাশাপাশি কিছু স্টিল ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যায় একটি রেল লাইন পার হয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুলের ছবি তোলার জন্য অন্য লাইনে যান। এরপর ছবি তোলার প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
জানা গেছে, ইসতিয়াক রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্র ও সৌখিন ফটোগ্রাফার ছিলেন। ইসতিয়াক আহমেদের মৃত্যুর পর সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে সমবেদনা জানান তার ফটোগ্রাফির ভক্তরা। ইশতিয়াক অসাধারণ ছবি তুলতেন। তার ছবিতে মুগ্ধ হতেন ছবিপ্রেমীরা। সেই ছবি তুলতে গিয়েই আজ প্রাণ হারালেন ইশতিয়াক।
এদিকে, শনিবার (৩ মে) সকালে তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের আজগবি এলাকার সদাশিবপুর-হাজিপাড়ায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
ঘটনার সময় মৃতের খালাতো ভাই ঢাকার কুর্মিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মুস্তাফিজুর রহমান তার সঙ্গে ছিলেন। তিনি জানান, রাফিদ কৃষ্ণচূড়া ফুলের ছবি তুলছিলেন। এমন সময় অন্য লাইনে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেনে তিনি কাটা পড়লে ঘটনাস্থলেই মারা যান। ভাইয়া আমাকে বলেছিলেন ভিডিও করার সময় ট্রেন আসে কি না খেয়াল রাখতে। উনি ছবি তোলার সময় ট্রেন চলে এলো। আমি ভাইয়াকে চিৎকার করে বলছিলাম, ট্রেন চলে এসেছে, লাইন থেকে সরে আসতে। কিন্তু তিনি শুনতে পাননি। এরপর ট্রেনের নিচে পড়ে যান ভাইয়া।
রাফিদ শিবগঞ্জ মডেল হাইস্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরে সে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পড়ালেখা সম্পন্ন করেন। পরে তিনি রাজশাহী কলেজে স্নাতকের জন্য ভর্তি হন। শেষ পর্যন্ত সেখানেই অধ্যায়নরত ছিলেন।
রাফিদের বাবা রেজাউল করিম একজন সরকারি চাকরিজীবী। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর অফিসে কর্মরত। চাকরির সুবাদে তারা শিবগঞ্জ পৌরএলাকার দেওয়ান জাইগীর এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
ভাড়া বাসার মালিক একেএস রোকন জানান, রাফিদ খুবই ভদ্র-শান্তশিষ্ট স্বভাবের একজন ছেলে। পড়ালেখায় যেমন মেধাবী ছিলেন। তার হাতের তোলা ছবিও খুবই চমৎকার। যে কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নাম বেশ পরিচিত।