
প্রিয় হাসু আপা, হাছা না মিছা জানি না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম আপনি অডিওতে কথা বলছেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে আসছেন। শুনে মনটা ভরে গেছে। তয়, এই কথা আপনি বলেছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় তো রয়ে গেছে। কারণ আজকাল পোলাপাইনে এআই পদ্ধতিতে কতো কিছু যে বানাইতেছে যা দেখে হতভম্ব হতে হয়। আসলে আজকালের পোলাপাইনরা অনেক বেশি এডভান্স।
আমাদের সময় যে সব কল্পনাই করতে পারতাম না ওরা আগামী একশ’ বছর পরে কী হবে তা নিয়েও ভেবে ফেলে। আর ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজের মতো করে কতো কিছু যে তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে তা সবাই জানে। ওদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে খুব বেশি ভাবনার বিষয়। ওরা মাঝে মাঝে সাইবার যুদ্ধেও লিপ্ত হয়। এ কারণেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা অনেক কিছুই বিশ্বাস করা যায় না
যাকগে সেসব কথা- আপনার বক্তব্যও এমন কিনা কে জানে। এ যুগের পোলাপাইন হলে না হয় যাচাই বাছাই করে দেখতে পারতাম। কিন্তু সে যুগের বলে, যাচাই বাছাই কেমনে করে তাই বুঝি না। একটি মোবাইলফোন চালাই। তাও ফোন করা আর ধরা ছাড়া আর কোনো ফাংশন বুঝি না। আপনি ক্ষমতায় থাকতে সবসময় বলতেন, এ দেশের মানুষের হাতে হাতে মোবাইলফোন পৌঁছে দিয়েছেন। সত্যি বলতে কি আপনার এ কথার সঙ্গে আমি কখনোই একমত হতে পারিনি। কারণ আমার হাতের মোবাইল আমার ইনকাম করা টাকা দিয়েই কিনতে হয়েছে। বরং এ মোবাইল কিনতে গিয়ে আপনার সরকারকে ট্যাক্স, ভ্যাট সবই দিতে হয়েছে।
সুপ্রিয় হাসু আপা, আজ মনটা ভীষণ বিষণ্ন। কারণ আপনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এক বছর পূর্ণ হলো। এই এক বছর আপনার চেহারা দেখি না। আপনার বক্তব্য টিভি পর্দায় দেখি না। আপনার হুমকি শুনি না। আপনার ধামকি শুনি না। আপনি যে এ দেশের মানুষকে খাওয়াচ্ছেন এসব কথা শুনি না। আপনি দেশকে সিঙ্গাপুর, ইউরোপ, আমেরিকা বানিয়েছেন এসব শুনি না। এসব কথা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এক বছর এসব কথা না শুনে খুবই ব্যথিত। মনটা আনচান আনচান করছে। আপা, কবে আবার বাংলাদেশের মাটিতে বসে আপনার এসব কথা টিভি পর্দায় দেখবো সে আশায় আছি। আপা, আপাগো, আপনাকে কেউ আয়রন লেডি বলতো। কেউবা বলতো মাদার অব হিউম্যানিটি। কেউ কেউ বলতো বিশ্বের সেরা শাসক। আপনি যখন মিয়ানমার থেকে দলে দলে ছুটে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দিলেন তখন একসঙ্গে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করে। তাদের নিয়ে বেশ কিছুদিন হইচই হয়। বিশ্ব জুড়ে প্রচারণা হয় আপনার। আর দেশে আপনার ভক্ত আমরা যারা রয়েছি তারা তো ভেবে বসেইছিলাম এবার নোবেল ঠেকায় কে? আমাদের আপা নোবেল পাবেই পাবে। কিন্তু নোবেল কমিটি কি দেখে যে, নোবেল পুরস্কার দেয় তা ওরাই জানে। ওদের চোখে আপনার এসব মানবীয় কাজ ধরা পড়েনি। যেমনটি ধরা পড়েনি পার্বত্য শান্তিচুক্তির সময়ও। কেনগো আপা, ওরা কি ভেবে বসেছিল আপনি যা করছেন তার পেছনে অন্য কোনো ইচ্ছা আছে। অন্য কোনো স্বার্থ আছে? জানি না আপা, জানি না। এক্ষেত্রে আপনার ভাগ্য সহায় হয়নি বলতে হয়। এসব নিয়ে এখন আর আফসোস করি না। কারণ এখন বুঝে গেছি স্বার্থ ছাড়া কোনো মানুষই কিছু করে না। না আপনি, না আমি। সবারই কোনো না কোনো স্বার্থ থাকে। তবে ভালোবাসার স্বার্থে যারা কাজ করে তারাই মহান হয়ে উঠে। ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেয় অন্যভাবে। আপনিও ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন আপনার কর্মগুণে। তবে এ ইতিহাস বড়ই বেদনার। আপনাকে নিয়ে পৃথিবীর যেকোনো মানুষ ইতিহাস লিখতে বসবে তাদের লিখতেই হবে ক্ষমতার মসনদ ছেড়ে আপনাকে পালাতে হয়েছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। এটা নির্মম সত্য।
সুপ্রিয় হাসু আপা, আপনার পালানোর এক বছরে দেশ আজ উত্তপ্ত। দেশ জুড়ে এগার দিনের সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। দেশ জুড়ে পয়েন্টে পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। কারণ আপনি পালিয়ে যাবার পর আপনার দল ও অঙ্গ সংগঠনের কর্মকাণ্ড দেশের জন্য নিরাপদ নয় মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জায়গায় সেই প্রমাণও দিয়েছে আপনার লোকজন। এ ছাড়া বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার আন্দোলনে আপনার দলের লোকজন ঢুকে পড়ছে বলে চাউর আছে। এ ছাড়া সরকারের কাছে খবর রয়েছে আপনি পালানোর বছর পূর্তিতে দেশে এক অরাজকতা তৈরি করতে পারে আপনার দলের লোকজন। আর এসবের পেছনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আপনার কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেগুলো প্রকাশ হয়েছে তাতে রয়েছে উস্কানিমূলক কথা। আপনাকে বলেছিলাম উস্কানিমূলক কথা থেকে বেরিয়ে আসতে। আপনি তা করেননি। বরং আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে প্রমাণিত হয় আপনি এবং আপনার দল কখনোই পুরনো ধারার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছেন না। এ ছাড়া কথায় কথায় বলা হয়, দেশে আওয়ামী লীগে ত্রিশ থেকে চল্লিশ পার্সেন্ট ভোট আছে। এটা তো আপা অনেক আগের কথা। আপনার অধীনে হওয়া তিনটি নির্বাচনে তো মানুষ ভোটই দিতে যায়নি। তাহলে এ মুহূর্তে এই পার্সেন্টেজ বেড়েছে নাকি কমেছে তা বলবেন কীভাবে? সামগ্রিক অবস্থা দেখলে তো বুঝা যায় অনেক কমেছে। একেবারে তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। উদাহরণ টানলে তিনটি নির্বাচনকেই টানা যায়। আপনি আপনার নিজের সমর্থকদেরই বিশ্বাস করতে পারেননি। এ কারণে আপনি বিনা ভোটের নির্বাচন, রাতের ভোট আর আমি- ডামির ভোটের দিকে গেলেন। আসলে আপনি জেনে গিয়েছিলেন আপনার দলের লোকজনদের অনেকেই আপনার বিরুদ্ধে চলে গেছে। ক্ষমতায় থাকতে হলে এমন নির্বাচন না দিলে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। এমনটা বুঝেই দেশকে গণতন্ত্রহীন বানিয়ে ছেড়েছিলেন। এর পরিণতি কি হলো তাতো দেখতেই পেলেন। পুলিশ প্রশাসন বলেন আর সিভিল প্রশাসন বলেন জনগণের শক্তির উপর কোনো শক্তি নেই তাতো বুঝে গেছেন। তাই বলছি জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করুন। ভুল স্বীকার করুন। ভুল স্বীকারের মধ্যে কোনো লজ্জা নেই। বরং আছে গৌরব।
হাসু আপা, সত্যিই কি আপনি পালানোর এক বছর পূর্তিতে দেশে অরাজকতা তৈরি করতে চান। আপনার নেতারা কি প্রস্তুত। যদি প্রস্তুত হয় তাহলে এখানেও এক বিরাট ভুল করছেন। অরাজকতা, অস্থিরতা তৈরি করে কোনো লাভ হবে না। লাভের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন না। বরং আপনার দলের নেতাকর্মীদের চাপের মুখে ফেলে দিবেন। এটা করতে যাবেন না কখনোই। ক্ষমতায় থাকতে যা করেছেন তা করেছেন। আর সে পথে গিয়ে হাঁটবেন না। সোজা পথে হাঁটুন। দেখবেন আজ না হয় কাল জনগণ আপনাকে মনে জায়গা দেবে। আপা, আরেকটি কথা বলছি শুনুন- বহু আগে আপনাকে বলেছিলাম- হেরেও জেতা যায়। আপনি কথা শুনেননি। আপনি জীবনে হারতে চান না। সবসময় জিততে চান। কিন্তু জীবনটাই হার-জিতের। কখনো জিতবেন আবার কখনো হারবেন। কিন্তু আপনাকে জিততেই হবে- এ মনোভাব যতদিন আপনার মনে থাকবে ততদিন আপনি ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন। এ ঝুঁকি হলো হারার ঝুঁকি। যেমনটা শোচনীয়ভাবে হেরেছেন গতবছর ৫ই আগস্ট। এই দিনটি বাংলাদেশের মানুষ পালন করেছে অন্যরকম উল্লাসে। অন্যরকম আনন্দে। অন্যরকম মেজাজে। এ থেকে জনতাকে ফিরিয়ে আনতে হুমকি-ধামকি দিয়ে সম্ভব নয়। আপনাকে আগে আপনার ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। ভবিষ্যতে এমন হবে না সেই মনোভাবও প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু তা না করে আপনি যে ভাষায় কথা বলছেন-তাতে মানুষ ভাবছে আপনি একটুও বদলাননি আপা। একটুকুও বদলাননি।
আজ এ পর্যন্তই আপা। যেখানেই থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। সবসময় এ দোয়াই করি। পাশাপাশি আরেকবার বলবো, আপা একটু ভেবে দেখবেন কথাগুলো। ভেবে দেখলে তো কোনো ক্ষতি নেই। বরং লাভ হতে পারে। যেখানে লাভ হতে পারে সেখানে ভেবে দেখবেন না কেন? এ প্রশ্ন রেখে গেলাম আপা।