বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিককে যৌনকর্মী হিসেবে তুলে ধরে সংবাদ প্রচার করায় মানবজমিন পত্রিকাকে তিনদিনের মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। নাহলে নির্বাচনের পর সারা দেশের পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে মানবজমিন কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ ৭টি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা এক আন্দোলন সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি দেন। সংগঠনগুলো উদ্যোগে সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের মধ্যদিয়ে এ আন্দোলন সমাবেশের আয়োজন করে।
এ বিষয়ে সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল হাসান নয়ন বলেন, নারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। যে নারী শ্রমিকদের বলা হয় গোল্ডেন গার্ল, সেই নারী শ্রমিকদের হেয় প্রতিপন্ন করে যৌনকর্মী অ্যাখা দেয়া হচ্ছে। যা নারী নীতি, আদালতের নির্দেশনা ও আইএলও কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কাজেই যারা বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের সংবাদ প্রচারণার অপরাধ করছে, তাদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনকারী হিসেবে মানহানির মামলা করার দাবি জানাচ্ছি।
এ সময় তিনি বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিককে যৌনকর্মী হিসেবে তুলে ধরে সংবাদ প্রচার করার অভিযোগে তিনদিনের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে নির্বাচনের পর সারা দেশের পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে মানবজমিন কার্যালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেন।
এ সময় মানববন্ধনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হচ্ছে পোশাক শিল্প। কিন্তু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানে বাংলাদেশি এক নারী পোশাক শ্রমিককে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, জীবনযাপন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নারী শ্রমিকরা রাতে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট। এটি বাংলাদেশের মানবজমিন পত্রিকাতেও প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে ধংস করার জন্য এ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মানবজমিন ও গার্ডিয়ানকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। দাবি না মানা হলে, মানবজমিনের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে এবং গার্ডিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ৬৫ শতাংশ শ্রমিকই নারী উল্লেখ করে মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রানী খান বলেন, ‘নারী শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করে এ শিল্পের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। অথচ ওই নারী শ্রমিকদেরই কিছু অসাধু সংবাদমাধ্যম মিথ্যাচার করে দেশের পোশাক শিল্পকে ধংস করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা এ কর্মসূচির মাধ্যমে গার্ডিয়ান এবং মানবজমিনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে তদন্ত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।’
শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, বাংলাদেশকে অপমান করে সংবাদ প্রকাশ করায় এ দুটি প্রত্রিকাকে ক্ষমা চাইতে হবে। সরকার যদি দ্রুত তাদের শাস্তির আওতায় না নিয়ে আসে, তাহলে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। মিথ্যা সংবাদ প্রত্যাহার করে ক্ষমা চেয়ে পত্রিকা দুটিতে সংবাদ প্রকাশেরও দাবি জানানো হয় ওই সমাবেশ থেকে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন ৮ কংগ্রেসম্যানের চিঠির পর বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের যাপিত জীবন নিয়ে প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে গত ২৩ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে ফ্রিল্যান্সার লেখক তাসলিমা দাবি করেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে নারী পোশাক শ্রমিকরা সন্তান ও নিজের জীবন বাঁচাতে যৌনকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন।
‘ওমেন ম্যাকিং খ্রিষ্টমাস জাম্পারস ফর ইউকে টার্নস টু সেক্স ওয়ার্ক টু পে বিল’ শিরোনামে ওই খবরে রুবি রফিক (ছদ্মনাম) নামে এক পোশাক শ্রমিকের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দাবি করা হয়, মূল্যস্ফীতির কারণে যেভাবে জীবনযাপনের ব্যয় বাড়ছে, তাতে রাতের বেলা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই রুবির কাছে।
যদিও এটি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান তৈরি পোশাক খাতকে লক্ষ্য করে দ্য গার্ডিয়ানের স্মিয়ার ক্যাম্পেইন বলে মন্তব্য করছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |