প্রচ্ছদ জাতীয় পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে ‘শহিদ ফেলানি সড়কের’ নামফলক স্থাপন

পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে ‘শহিদ ফেলানি সড়কের’ নামফলক স্থাপন

পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের সামনের সড়কের নামকরণ ‘শহীদ ফেলানি সড়ক’ করা হয়েছে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বারিধারায় ভারতীয় দূতাবাসের সামনে সড়কে এই নামকরণ করে পিপলস অ্যাক্টিভিস্ট কোয়ালিশন-প্যাক নামের একটি সংগঠন।

এর আগে সড়কটির নাম পরিবর্তনের অনুমতি না থাকায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বাকবিতন্ডা হয়। এসময় ভারতবিরোধী স্লোগান দেয় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপস্থিত ছিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও। তবে, শেষ পর্যন্ত দূতাবাসমুখী সড়কের প্রবেশ পথেই স্থাপন করা হয় ফেলানির নামফলক।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয় নাগেশ্বরীর কিশোরী ফেলানী। হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সন্তান হত্যার বিচার পায়নি পরিবার। ফেলানী হত্যার বিচারের আশায় এখনো কাঁদে তার পরিবার।

জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের শ্রমিক নূরুল ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায়। সেখানেই তিনি একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। এর মধ্যে বাংলাদেশে নিজের খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় কিশোরী ফেলানী খাতুনের। সেই উদ্দেশ্যে বাবা নুরুল ইসলামের বড় মেয়ে ফেলানীকে নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে রওনা দেন।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুয়াশা ঢাকা ভোর ৬টার দিকে দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার পার হচ্ছিল ফেলানী ও বাবা নুরুল ইসলাম। মইয়ের সামনে ছিল বাবা নুরুল ইসলাম তার পেছনে ফেলানী। এ সময় বিএসএফ টের পেয়ে গুলি ছুড়লে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফেলানীর বাবা নেমে পড়ায় বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারে ঝুলে পড়ে কিশোরী ফেলানী। গুলিবিদ্ধ হয়ে ছটফট করে পানি পানি বলে চিৎকার করতে করতে নির্মমভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে ফেলানী। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তার লাশ।

এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফএর এ কোর্টে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফর বিশেষ কোর্ট। রায় প্রত্যাখ্যান করে আবার বিচার দাবি জানায় ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুন:বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর বিএসএফর আদালতে শুধু স্বাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ২ জুলাই ওই আদালত পুনরায় আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। রায়ের পর একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিমকোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। এর পর ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনাভাইরাস শুরুর আগে শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি।