
স্বপ্ন ছিল আকাশে জয় করার, দায়িত্ব ছিল দেশমাতৃকার আকাশপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। সেই স্বপ্ন আর দায়িত্বকে বুকে ধারণ করেই এগিয়ে চলেছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। কিন্তু তার উড়াল দীর্ঘস্থায়ী হলো না। স্বপ্নপূরণের আগেই আকাশেই থেমে গেল তার যাত্রা। নিয়মিত প্রশিক্ষণ চলাকালে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এই তরুণ পাইলট। ২৭ বছরের তৌকির রেখে গেছেন অগণিত মানুষের ভালোবাসা, গর্ব, এবং চিরস্থায়ী শূন্যতা। তার এমন বিদায় মেনে নিতে পারছেন না পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী, শিক্ষক এমনকি গোটা জাতি।
গত সোমবার রাজধানীর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফ্লাইটে সমস্যা দেখা দেওয়ার পর পাইলট সেটিকে ফাঁকা জায়গায় নিতে চেষ্টার কোনও কমতি রাখেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা সফল হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তারা একটি গাছে প্যারাসুট ও রঙিন বেলুনের মতো কিছু আটকে থাকতে দেখেছেন। তাদের অনেকের ধারণা, পাইলট দুর্ঘটনার আগে বিমান থেকে লাফ দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে চেষ্টা করেছিলেন। কারণ বিধ্বস্ত স্থানের কিছুটা দূরে প্যারাসুট আটকে থাকা গাছটির অবস্থান পাওয়া গেছে।
পরে জানা যায়, পাইলট তৌকির ইসলামকে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে একটি ভবনের ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে তিনি শেষ মুহূর্তে প্যারাসুট নিয়ে বিমান থেকে লাফ দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্যারাসুটটি গাছে আটকে যাওয়ায় নিরাপদে নিচে নামা সম্ভব হয়নি। সেখানেই হয়তো তৌফকিরের জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো কেটেছে।
অন্যদিকে দুর্ঘটনার ক্ষত এখনো স্পষ্ট মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে। সাজানো-গোছানো ক্যাম্পাসটির একাংশ যেন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। দুর্ঘটনার তিন দিন পরেও আশপাশের বাতাসে ভাসছে পোড়া গন্ধ, গুমোট এক পরিবেশ। চিরচেনা কোলাহল, শিশির কণ্ঠের হাসি-আনন্দ সব যেন বিলীন। প্রধান ফটক বন্ধ থাকলেও বাইরে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। প্রতিনিয়তই বাড়ছে সেই ভিড়ের পরিধি, চোখেমুখে আতঙ্ক আর বিস্ময়।
অচেনা এক শূন্যতা ঘিরে ধরেছে স্কুলটি, যেখানে প্রতিদিন প্রাণচঞ্চল ছেলেমেয়েরা ছুটে বেড়াত—আজ সেখানে যেন বাতাসও বোবা। একসঙ্গে হারিয়ে যাওয়া তাজা প্রাণ আর তরুণ পাইলটের অকালমৃত্যু কেবল পরিবারের নয়, গোটা জাতির কাছেই এক অপূরণীয় ক্ষতি।