
চলতি এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিনে পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে উল্লাস করেছে একদল ছাত্র। মেয়েদের স্কুলটির ফ্যান, বাথরুমের দরজা, কমোড ও বৈদ্যুতিক লাইট ভাঙচুরসহ ব্যাপক তাণ্ডব চালায় তারা। আর নিজেদের দায়িত্বহীনতা ঢাকতে এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত কেন্দ্রটির কর্তৃপক্ষ। রোববার (১০ মার্চ) দুপুর ১টা পর বিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত (তত্বীয়) পরীক্ষা শেষে এই ঘটনা ঘটে। এতে সরকারি সম্পত্তির লক্ষাধিক টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। কেন্দ্র সচিব বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক নুরুল ইসলাম ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা এএসএম মাসুম বিল্লাহ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় ২০৩ নম্বর কক্ষে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৩২৪৫৯ থেকে ২৩২৪৭৩ পর্যন্ত রোল নম্বরধারী ১৫ জন এবং উদ্বোধন বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৩২৬০৫ থেকে ২৩২৬২৯ পর্যন্ত ১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ওই কক্ষের চারটি বৈদ্যুতিক পাখা, তিনটি টিউবলাইট এবং কক্ষ সংলগ্ন প্রসাধন রুমে ৬টি ওয়াশরুম/বাথরুমের দরজা, ফ্লাশ প্যান, বাথরুমের কমোড ভাঙচুর করে। ২০৫ নম্বর কক্ষে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৩২৪২৮ থেকে ২৩২৪৪৩ পর্যন্ত রোল নম্বরধারী ১৬ জন এবং পৌর আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৪২৫১৪ থেকে ২৪২৫২৮ পর্যন্ত ১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ওই কক্ষের দুটি বৈদ্যুতিক পাখা এবং দুটি টিউবলাইট ভাঙচুর করে তারা।
বিদ্যালয়ের কর্মচারী (আয়া) মাকসুদা বেগম জানান, পরীক্ষা শেষ হলে পরীক্ষার্থীরা হৈ হুল্লোড় করে নেমে যায়। পরে রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখি সব ভাঙাচোরা। তখন স্যারেরাও দায়িত্ব পালন শেষ করে চলে গেছে দেখি।
এদিকে বিকেলে স্কুলে এসে এই দৃশ্য দেখে ক্ষোভ ফেটে পড়েন হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের কাজ শেষ হলে উত্তরপত্র জমা নিয়ে পরীক্ষার্থীরা বের হবার পরে কক্ষ পরিদর্শক বের হবার কথা। তাহলে কক্ষ পরিদর্শক কি স্টুডেন্ট (পরীক্ষার্থী) কক্ষে রেখে উত্তরপত্র নিয়ে বের হয়ে গেছেন? কর্মরতরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে সরকারি সম্পদের এতো বড় কোনো ক্ষতি হতো না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন ছাত্রী বলেন, প্রতি বছরই এমন ঘটছে। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছেলেরা আমাদের ঈর্ষা করে। মেয়েদের স্কুলে ঢুকতে পারে না তারা। কেবল এসএসসি পরীক্ষার সময় স্কুলে ঢোকার সুযোগ পায়। আর প্রতিবছরই প্রতিহিংসা পুরাতে আমাদের বাথরুম এবং বেঞ্চে আজেবাজে কথা লিখে যায়। আর এবার এমন তাণ্ডব চালাল।
বিদ্যালয় ভাঙচুরের খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্র সচিব মাওলানা এএসএম মাসুম বিল্লাহ। তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করে বলেন, ‘এবিষয়ে আমি কিছুই বলবো না। যা বলার প্রধানশিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব বলবেন।’