
পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলামকে। আর বাংলাদেশের ২৮তম পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব পাচ্ছেন বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৫তম ব্যাচের এক কর্মকর্তা।
সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর বরাতে জানা গেছে, সাময়িক রুটিন কাজ পরিচালনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য এক্সপার্ট খ্যাত নজরুল ইসলাম বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
নজরুল ইসলাম সৌদি আরবের রিয়াদে ডেপুটি চিফ অব মিশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, লেবানন, ইরাকে বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অন্যদিকে, জসীম উদ্দিনের উত্তরসূরি হিসেবে সরকার বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৫তম ব্যাচের এক কর্মকর্তাকে চূড়ান্ত করেছে। বিদেশের একটি গুরত্বপূর্ণ মিশনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে পররাষ্ট্রসচিবের পদ থেকে জসীম উদ্দিনকে সরিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ৭ মে জসীম উদ্দিনকে জানিয়ে দেওয়া হয় সরকার আর তাকে পররাষ্ট্রসচিব পদে রাখছে না। এমন পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ কাজের পাশাপাশি অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং বিদেশি অনেক দেশের সঙ্গে যোগাযোগে কিছুটা স্থবিরতা দেখা যায়। তবে পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন এখনো নিয়মিত অফিসে আসছেন। তবে তিনি ফাংশনাল নন, অর্থাৎ দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন বৈঠকে জসীম উদ্দিন অনুপস্থিত। যার কারণে মন্ত্রণালয়ে নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দিয়েছে। সবশেষ, গত ১৫ মে টোকিওতে জাপানের সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে জসীম উদ্দিনের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ অবধি বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন নজরুল ইসলাম।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গত বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। নতুন সরকার গঠনের মাস খানেকের মাথায় তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সরকার। তার স্থলে নতুন পররাষ্ট্র সচিব করা হয় তৎকালীন চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিনকে।
জসীম উদ্দিনের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ১২ ডিসেম্বর। অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে একটি দেশের রাষ্ট্রদূত করার প্রস্তাব দিলেও তিনি নিজ সিদ্ধান্তে পূর্ণাঙ্গ সময় চাকরি শেষ না করেই ছুটিতে যাচ্ছেন।
চীনে রাষ্ট্রদূত হওয়ার আগে জসীম উদ্দিন কাতার এবং গ্রিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন নয়াদিল্লি, টোকিও, ওয়াশিংটন ডিসি এবং ইসলামাবাদেও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনুবিভাগের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কনস্যুলার পরিষেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনায় রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন পুরস্কার পায়।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট