ধর্ম ও জীবন: বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ রাত হচ্ছে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর। এ রাতে প্রথম মক্কার হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ মুহাম্মাদ (সা.)-এর কাছে পবিত্র কোরআন নাজিল করেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি কদর (মর্যাদাপূর্ণ) রজনীতে। আপনি কি জানেন মহিমাময় কদর রজনি কী? মহিমান্বিত কদর রজনি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষার উদয় পর্যন্ত। ’ (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)।
পবিত্র কোরআনের কারণেই আল্লাহ তাআলা এ রাতের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ রাতে মহান আল্লাহ বান্দার রিজিক বণ্টন করেন। আল্লাহর আদেশে ফেরেশতারা রহমত, কল্যাণ ও বরকত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন।
পবিত্র কোরআনে এ রাতকে বরকতময় রাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ রাতে মহান আল্লাহ নিজ বান্দাদের হাজার মাসের ইবাদত-বন্দেগির সমান সওয়াব দান করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ১৯০১)
তবে এ মহিমান্বিত রাতকে মজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে আল্লাহ তাআলা সুপ্ত রেখেছেন। সুনির্দিষ্ট করেননি তিনি এ রাতকে। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে এ রাতের অনুসন্ধান করতে বলেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করো।’ (বুখারি: ২০১৭)
শবে কদর নির্দিষ্টকরণে ৪০ টির অধিক মতামত রয়েছে। কিছু বর্ণনার ভিত্তিতে এ রাত রমজানের শেষ সাত দিনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাসুল (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শবে কদর অন্বেষণ করতে চায়, সে যেন রমজানের শেষ সাত রাতের মধ্য তা অন্বেষণ করে।’ (বুখারি: ২০১৫; মুসলিম: ১১৬৫)
শবে কদর সম্পর্কে বেশির ভাগ আলেম বলেছেন, ২৭ তম রাতই শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মতামত দিয়েছেন। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রাসুল (সা.) আমাদের যে রাতকে শবে কদর হিসেবে কিয়ামুল্লাইল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা হলো রমজানের ২৭ তম রাত।’ (মুসলিম: ৭৬২)
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা রমজানের ২৭ তম রাতে অনুসন্ধান করে।’ (আহমাদ: ২ / ১৫৭)
আবার কোনো কোনো বর্ণনা মতে ২৩ রমজানের রাতে শবে কদর হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আবদুল্লাহ ইবনে উনায়স (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমাকে কদরের রাত দেখানো হয়েছিল। এরপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাকে ওই রাতের ভোর সম্পর্কে স্বপ্নে আরও দেখানো হয়েছে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। বর্ণনাকারী বলেন, অতএব ২৩ তম রাতে বৃষ্টি হলো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সঙ্গে (ফজরের) নামাজ আদায় করে যখন ফিরলেন, তখন আমরা তার কপাল ও নাকের ডগায় কাদা ও পানির চিহ্ন দেখতে পেলাম। বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনে উনায়স (রা.) বলতেন, তা ছিল ২৩ তম রাত।’ (মুসলিম: ২৬৬৫)
সুতরাং শবে কদর কবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা না গেলেও রাতটির কিছু আলামত হাদিসে বর্ণিত আছে। তা হলো—রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না, নাতিশীতোষ্ণ হবে অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না, মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে, সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে, কোনো ইমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন, ওই রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে, সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। (সহিহ্ ইবনে খুযাইমা: ২১৯২; বুখারি: ২০২১; মুসলিম: ৭৬২)
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |