প্রচ্ছদ অপরাধ ও বিচার পদ বাগিয়ে নিতে স্ত্রীকে অস্বীকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতার

পদ বাগিয়ে নিতে স্ত্রীকে অস্বীকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতার

অপরাধ: নিজের স্ত্রীকে অস্বীকার করার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ফুয়াদ হোসেন শাহাদাতের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে বিয়ে করলেও তথ্য লুকিয়ে বিভিন্ন কমিটিতে পদ বাগিয়েছেন এই ছাত্রলীগ নেতা। যদিও ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিবাহিতরা ছাত্রলীগের সদস্য হতে পারেন না।

নিজেকে শাহাদাতের স্ত্রী দাবি করে রাজধানীর এক কলেজ ছাত্রী জানান, ২০১৬ সালে মুসলিম আইনে তারা বিয়ে করেন। যখন তিনি ফুয়াদের কাছে তাদের বিয়ের সামাজিক স্বীকৃতির জন্য অনুরোধ করেন তখন মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এই তরুণী। তিনি এ ঘটনায় বিচার চেয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগ করেছেন।

এই তরুণী একই অভিযোগে থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। আর ওই ছাত্রলীগ নেতাও তরুণীর বিরুদ্ধে তিনটি জিডি করেছেন।

ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত নামে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই সহসভাপতি এর আগে ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীও ছিলেন এই নেতা।

গত ২৪ মে অভিযোগকারী তরুণী ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, ফুয়াদের সঙ্গে ১০ বছরের সম্পর্ক। এই দীর্ঘ সময় তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিষয়ে তিনি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি মীমাংসা করার দায়িত্ব দেন। পরে তিনি শেখ ওয়ালী আসিফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি গত ৫ এপ্রিল মীমাংসা করতে বসার সময় নির্ধারণ করেন৷

কিন্তু ৩ এপ্রিল ফুয়াদ তাকে অনেক অনুরোধ করে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করার জন্য তার বাসায় ডেকে নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন ওই তরুণী। তিনি বলেন, বাসায় যাওয়ার পর সমাধান না করে ফুয়াদ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি লাথি মারেন এবং মারাত্মকভাবে জখম করেন। তিনি উপায় না পেয়ে ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি শেখ ওয়ালী আসিফকে তৎক্ষণাৎ বিষয়টি জানান। পরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।

অভিযোগে ওই তরুণী আরও বলেন, ‘সামাজিকভাবে স্বীকৃতি চাওয়ার পর থেকেই ফুয়াদ আমার পরিবারের সবার নামে মামলা দেওয়া এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতি করার হুমকি দেন। এমনকি আমাকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি ও আমার মানসম্মান নষ্ট করার হুমকি দিচ্ছেন। তাঁর এসব কার্যকলাপে আমি আতঙ্কিত। ২০১৬ সালে মুসলিম আইন অনুসারে আমাদের বিয়ে হয় এবং সব নথি নিজের কাছে আটকে রাখেন ফুয়াদ। পরে তিনি তা অস্বীকার করেন।’

ওই তরুণী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফুয়াদ আমাকে ২০১৬ সালে বিয়ে করেন কিন্তু সামাজিক স্বীকৃতি দিতে চাইছেন না। বরং তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের জেরিন নামের এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভবত ওই মেয়েকেও তিনি বিয়ে করেছেন। সামাজিক স্বীকৃতি চাইলে ফুয়াদ আমাকে কয়েক দফায় আমাকে মারধর করেছেন। এ ছাড়া নানা হুমকিও দিয়েছেন। এ ঘটনায় আমি ৪ এপ্রিল ও ২৬ মে দুটি জিডি করেছি এবং ছাত্রলীগ সভাপতি এবং সম্পাদককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

এদিকে ফুয়াদ হোসেন শাহাদাতের ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, তার টাইমলাইনে জেরিনের সাথে তার খারাপ সময়ে তার অবদান তুলে ধরে একটি ছবি শেয়ার করেন। সেখানে তিনি লিখেন, ভেঙে পড়া মুহূর্ত গুলোতে সব সময় পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছো। যখন কি করব দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম, সাহস যুগিয়েছিলে ধৈর্য ধারণ করার। তোমার সাহসই হয়তোবা উঠে আবার দাঁড়াতে পেরেছি কঠিন মুহূর্ত থেকে। ধন্যবাদ তোমাকে।

তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ফুয়াদ দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে ওই তরুণী যেসব অভিযোগ করেছেন, তার পুরোটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি বলেন, ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর কখনো বিয়ে হয়নি। তার সম্মানহানির উদ্দেশ্যে ওই নারী মিথ্যা অভিযোগ করছেন। ওই নারীর বিরুদ্ধে তিনি একাধিক জিডি করেছেন।

গত বছরের ৩ নভেম্বর ছাত্রলীগের এই নেতা হাজারীবাগ থানায় সম্মানহানীর অভিযোগ এনে এই তরুণীর বিরুদ্ধে প্রতারণার একটি জিডি করেন। গত ৪ এপ্রিল পল্লবী থানায় আবারও একটি জিডি করেন তিনি। জিডিতে ফুয়াদ উল্লেখ করেন, তানজিয়া নিজেকে আমার স্ত্রী দাবি করে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের থেকে টাকা নেয়। যদিও তার সাথে আমার কোন বৈবাহিক সম্পর্ক নেই।

এরপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যাপের সাহায্যে ওই তরুণী ফাঁসাতে পারেন— এই ভয়ে গত ৭ এপ্রিল ফুয়াদ রাজধানীর শাহবাগ থানায় আরেকটি জিডি করেন৷

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ওই তরুণীর অভিযোগটি পেয়েছি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আমরা দ্রুত এই বিষয়ে ফয়সালা করতে পারব আশা করি। অভিযোগের সত্যতা পেলে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান ইনান।