জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম আল নাহিদের পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণের আবেদনপত্র জমা এবং আবেদনে স্বাক্ষর দিয়েছেন ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা মো. তুহিন রানা।
সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশীদ বরাবর আবেদনপত্র জমা দেন ছাত্রদলের ওই নেতা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ১১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক। তিনি নিজেই সিয়াম আল নাহিদের হয়ে ওই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিয়াম আল নাহিদ ২০১৮-১৯ সেশনের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি এর আগে দুইবার ইয়ার ড্রপ দিয়েছেন। আরেকবার ইয়ার ড্রপ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকবে না।
এদিকে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সিয়াম আল নাহিদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
তার রুম থেকে দেশীয় অস্ত্র এবং মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে সিয়ামসহ ৭১ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে সেমিস্টার আকারে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯তম সিন্ডিকেট সভায় নোটিশ জারি করেছে প্রশাসন।
জুলাই-আগস্টের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম আল নাহিদকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে তার হয়ে আত্মসমর্পণপত্র জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতা ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তুহিন রানা।
তবে এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। তারা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, কোনোভাবেই এ ধরনের অন্যায়কে বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবির অন্যতম সমন্বয়ক এস এম আশিকুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যারা অস্ত্র ও লাঠি হাতে আক্রমণ চালিয়েছে, তারা কখনোই আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। অপরাধী যে-ই হোক, কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা অন্য কোনো কুচক্রী মহল অপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করে, তা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেবো না।
’
আরেক শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রভাব কমেছে। এখন আবার ছাত্রদল প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। আমরা এ ধরনের রাজনীতি চাই না। তবে, যারা শিক্ষার্থীদের পাশে যারা থাকবে, তাদের ছাড়া অন্য কারও প্রয়োজন নেই। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই সঠিকভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’
এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা তুহিন রানা বলেন, ‘আমি মানবিক কারণে তার এই আত্মসমর্পণ পত্রটি তার হয়ে জমা দিয়েছি। কারণ, সে আগে দুইবার ড্রপ খেয়েছে। আর একবার খেলে তার ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাবে।’
ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আল আমিন ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কমিটিতে তুহিনের কোনো পদ নাই। তবে, বিষয়টা যদি সত্য হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব। যদিও (তুহিন রানা) সে রকম সক্রিয় না, কোনো প্রোগ্রামে আসে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড.হারুন অর রশীদ বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি আত্মসমর্পণের আবেদনপত্র জমা দিতেই পারে, এটা তার অধিকার। আবেদনপত্রটি শৃঙ্খলা বোর্ডে পাঠানো হবে, তারপর শৃঙ্খলা বোর্ড বিবেচনা করে যদি শাস্তি মওকুফ করে; তাহলে সেটি সিন্ডিকেটে পাঠানো হবে। সিন্ডিকেটে যেটা সিদ্ধান্ত হবে, সেটা আবার রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠাবে।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |