
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সন্ত্রাসী হামলাসহ বিগত ১৬ বছরের গুম-খুনের অভিযোগে নিষিদ্ধ হওয়ার বছর না পেরোতেই প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগ এ কমিটি ঘোষণা করেছে।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশ ছাড়েন। ওই বছরের ২৩ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। বর্তমানে সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতা ভারতে অবস্থান করছেন এবং অন্যান্য নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছেন। দেশে যারা আছেন, তারা আত্মগোপনে আছেন। প্রকাশ্যে এলেই হচ্ছেন মবের শিকার অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিচ্ছেন উত্তেজিত ছাত্র-জনতা।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ২০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদের প্যাডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠি দেওয়া হয়েছে পদপ্রাপ্ত নেতাদের। তবে প্রকাশ করা হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি এক বছরের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৩৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সম্প্রতি সেটির সংখ্যা বাড়িয়ে ২০১ সদস্য করা হয়েছে। চিঠির মাধ্যমেই এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে পদপ্রাপ্ত অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। হাসিব চৌধুরী বাধন লেখেন, “আলহামদুলিল্লাহ, সহসভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েস শিশির একটি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “সাংগঠনিক সম্পাদক।”
আল আমিন হাওলাদার লেখেন, “আলহামদুলিল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।”
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া আফিয়া সুপ্তি লেখেন, “কমিটি যেটাই হোক, জগন্নাথ একটা ইতিহাস গড়েছে, এটা সত্যি। দেশের এমন অরাজক পরিস্থিতিতে, সকল সংকটের বিষয় মাথায় রেখে, কর্মীদের ঝুঁকির মুখে না ফেলে যেভাবে ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের সাংগঠনিক পরিচয় দেওয়া হয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার। যোগ্য হয়েও দীর্ঘ সময় পদ ও পরিচয়বিহীন কেটেছে আমাদের জীবন।”
আরেক শিক্ষার্থী জুবাইর আল মাহমুদ আকন্দ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের স্ট্যাটাস শেয়ার করেন।
শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের দাবি, ৫ আগস্টের পর পুরান ঢাকার বংশালসহ তিনটি থানায় তাদের বিরুদ্ধে ১০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। সাবেক ও বর্তমান মিলে প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী এসব মামলার আসামি। বিভিন্ন একাডেমিক কাজে ক্যাম্পাসে গেলে বা আশপাশে ঘোরাফেরা করার সময় ১২-১৩ জন নেতাকর্মী মারধরের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ৪২১ জন নেতাকর্মীর তালিকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দিয়েছে জবি শাখা ছাত্রদল।
শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, “৫ আগস্টের পর আমরা আর ক্যাম্পাসে যেতে পারছি না। গেলেই মারধর করে পুলিশে দেওয়া হচ্ছে। তারপরও ২০১ সদস্যের কমিটিতে অনেকেরই ছাত্রত্ব আছে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেলেও, এ বিষয়ে শাখার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
এদিকে পদপ্রাপ্তরা সরব হয়ে উঠেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এদের অনেকের ছাত্রত্ব আছে, আবার অনেকের নেই। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কমিটি এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী যদি নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যথাযথ প্রমাণ পেলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে।”











































