প্রচ্ছদ জাতীয় নির্বাচনে গোলাগুলি: মৃত্যু ১, পুলিশ পরিদর্শকসহ আহত ৭

নির্বাচনে গোলাগুলি: মৃত্যু ১, পুলিশ পরিদর্শকসহ আহত ৭

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিতে হৃদয় ভূঁইয়া (২৩) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এসময় পুলিশ সদস্যসহ আরও ৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার (৯ মার্চ) বিকেলে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাহিরে নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত হৃদয় ভূইয়া দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থক। ঘটনার পর ওই এলাকা পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচনে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইউপি সদস্য পদে দুধঘাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোরগ প্রতীকে আব্দুল আজিজ সরকার ও তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু প্রতিদ্বন্দ্বী করেন। ভোট গ্রহণ শেষে আজিজ সরকার মোরগ প্রতীকে ৯২৯ ভোট ও তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু ৮১১ ভোট পান। এসময় ফলাফল জানার পর ওই কেন্দ্রের প্রিজাইর্ডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে পুনরায় ভোট গণনার অনুরোধ করেন।

পুনরায় ভোট গণনা করে রাজুর পক্ষে এক ভোট যুক্ত হয়। এ নিয়ে রাজুর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। রাজু প্রিজাইর্ডিং কর্মকর্তাকে তৃতীয় দফায় ভোট গণনা করার দাবি করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে রাজু কৌশলে কেন্দ্রের বাহিরে চলে যান। বিষয়টি তার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা লোকজনকে উপজেলায় আসতে বাধা সৃষ্টি করা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।

এসময় কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থক দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে হৃদয় ভুঁইয়া ও কামাল ভূঁইয়ার ছেলে ওমর ফারুক (২৭) গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়াও আপন, সাখোয়াত, মফিজুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, রাশেদ ও রিপনসহ আহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পথে হৃদয় ভূঁইয়া মারা যান।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) সাইফুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক(এএসআই) খবিরউদ্দিন, কনস্টেবল, মঞ্জু মিয়া, জুয়েল রানা, আব্দুস সালাম, কবির হোসেন, নূর মোহাম্মদ, আল আমিন আহত হন। পুলিশ সদস্যদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

নিহত হৃদয়ের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের রাজু নির্বাচিত হয়। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন আজিজ সরকারকে জয়ী ঘোষণা করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে পুনরায় ভোট গণনা করে ফলাফল দেয়ার অনুরোধ করলে আজিজ সরকার বহিরাগত লোকজন নিয়ে গুলি করে। এসময় পুলিশ ও রাজুর সমর্থকের ওপর গুলি চালায়।

সোনারগাঁ থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামান বলেন, নির্বাচন শেষে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এসময় আজিজ সরকারের সমর্থকদের গুলিতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে পুলিশের ৮ সদস্য আহত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. মুজিবুর রহমান গত বছরের ২০ মে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে এ পদটি শূন্য হয়। ফলে শনিবার শূন্য পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।