রাজনীতি: ভোটের দিন ৭ জানুয়ারি কী করবে আন্দোলনে থাকা বিএনপি? এ নিয়ে দেশজুড়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। নির্বাচন প্রতিহত করার মতো কোনো শক্তি দেখাবে, নাকি শান্তিপূর্ণ ভোট বর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে তারা? অবশ্য দলের নীতিনির্ধারক মহল জানিয়েছে, নির্বাচন ‘ঠেকাও’ আন্দোলনের বদলে ভোট বর্জনকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। ভোটের আগের দিন শনিবার থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টা দেশজুড়ে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে ‘একতরফা’ নির্বাচনের প্রতি ‘অনাস্থা’ জানানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। নাশকতা আর সহিংসতা এড়িয়ে এ কর্মসূচিও যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হয়, সেদিকে সতর্ক থাকবে বিরোধী দলটি। সূত্রে জানা গেছে, ভোটের দিন কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষে না জড়াতে ইতিমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি মনে করে, এবার কোন প্রক্রিয়ায় কী ধরনের নির্বাচন হচ্ছে—জনগণের কাছে তা একেবারেই স্পষ্ট। ফলে বিএনপির ভোট বর্জনের আহ্বানে মানুষ ব্যাপকভাবে সাড়া দেবে। এর মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি চূড়ান্ত অনাস্থা প্রকাশিত হবে।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে গত বছরের ১৪ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। ধারাবাহিক কর্মসূচির পর গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডাকে দলটি। ওই কর্মসূচি কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনার জেরে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সারা দেশে নেতাকর্মীরা ব্যাপক ধরপাকড়ের শিকার হন। এই প্রেক্ষাপটে একদফা দাবি আদায়ে চার দফায় পাঁচ দিন হরতাল এবং ১২ দফায় ২৩ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। সেইসঙ্গে সাধারণ মানুষকে ভোট বর্জনের পাশাপাশি সরকারকে অসহযোগের আহ্বানও জানায় দলটি। তবে ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কঠোর অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসেছে বিএনপি। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি না দিয়ে গত কয়েক দিন ধরে মানুষকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি চলছে। আজ বৃহস্পতিবার পঞ্চম দফার গণসংযোগ কর্মসূচি শেষ হচ্ছে। জানা গেছে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভোট বর্জনের আহ্বানে আগামীকাল শুক্রবার ঢাকায় গণমিছিল কিংবা পেশাজীবীদের ব্যানারে সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে বিএনপি ও যুগপৎ শরিকদের। সেটা না হলে ওইদিনও গণসংযোগের মধ্যেই সীমিত থাকতে পারে বিএনপির কর্মসূচি। তবে নির্বাচনের তপশিল অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৮টায় ভোটের প্রচার-প্রচারণার শেষ সময়। ফলে সেদিন ভোটবিরোধী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করা সম্ভব হবে কি না—সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। অবশ্য ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগের দিন থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধ ডাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির।
তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শুধু ভোটের দিনও হরতাল দেওয়া হতে পারে। তবে এই কর্মসূচিও শুধু ভোট বর্জনের আহ্বান ও একদফা দাবি জানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কর্মসূচি যা-ই হোক না কেন—কোনো রকম উসকানিতে পা না দিয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে তা পালন করার জন্য তৃণমূলে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘ভোট ঠেকানো কিংবা ভোট প্রতিহত করা বিএনপির আন্দোলনের লক্ষ্য নয়। বিএনপি এই একতরফা, ডামি নির্বাচন বর্জন করেছে। দেশবাসীকেও এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আসছে। সেই লক্ষ্যে গণসংযোগমূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। জনগণ এরই মধ্যে বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচন ঘিরে কী হচ্ছে তা শুধু দেশের জনগণই নয়, আন্তর্জাতিক তথা গণতান্ত্রিক বিশ্বও ওয়াকিবহাল। বিএনপি এই নির্বাচনী প্রহসন বর্জন করেছে। বিএনপি ভোট বর্জনের যে আহ্বান জানিয়েছে, তা অব্যাহত রাখবে। নির্বাচনের দিন ঘিরে বিএনপি যে কর্মসূচি দেবে সেটিও শান্তিপূর্ণ আহ্বানের মধ্য দিয়ে পালিত হবে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর মহাসমাবেশের আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের পরিণতি শাপলা চত্বরের চেয়েও ভয়াবহ হবে। ওবায়দুল কাদের তাঁর সেই অগণতান্ত্রিক এবং বেআইনি হুমকি কার্যকর করেছিলেন। তাঁর সেই বক্তব্যের প্রতিফলন হিসেবে এখনও বিএনপি নেতাকর্মীর নামে বিভিন্ন সাজানো নাশকতার মামলায় কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। তবে এসব করে লাভ নেই। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ‘একতরফা’ নির্বাচন আয়োজনের দায় ক্ষমতাসীন দলের। সেই হিসেবে মার্কিন ভিসা নীতি থেকে শুরু করে অন্যান্য সম্ভাব্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও দায় তাদের হবে। সে ক্ষেত্রে এই নির্বাচনের সঙ্গে যারাই সম্পৃক্ত রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেই আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো সরব হয়ে উঠবেন বলে মনে করছেন। সেখানে নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে কোনো সহিংসতা ও নাশকতা সৃষ্টির সুযোগ দিতে চাইছেন না বিএনপি নেতারা। তবে শনিবার থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত ‘একতরফা’ নির্বাচনের প্রতিবাদ হিসেবে ৪৮ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। নির্বাচনের দিন যাতে ভোটের সরঞ্জমাদি নির্বিঘ্নে না পৌঁছাতে পারে, সে জন্য এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। সেখানেও সহিংসতাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে ওই দু’দিন দলের সব নেতাকর্মীকে একযোগে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |