
এক সময় যা তারা নিজেরাই বানিয়েছিল, আজ সেটাই কাল হয়ে ফিরেছে আওয়ামী লীগের জন্য। ইতিহাস ঘাটলেই দেখা যায়, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার এক বিশেষ ক্ষমতা আইন চালু করেছিল। ওই আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছিল—কোনও রাজনৈতিক দল যদি জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, তাহলে সরকার সেটিকে নিষিদ্ধ করতে পারবে।
এরপর সময় ঘুরে আসে ২০০৯। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকার নিয়ে আসে সন্ত্রাস বিরোধী আইন। এই আইনের আওতায় দল বা সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত’ বলেই নিষিদ্ধ করা সম্ভব। পাশাপাশি ১৯৭৮ সালের রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশে রাজনৈতিক দলের ওপর আরও কড়া নিয়ম চাপিয়ে দেয়া হয়—সশস্ত্র বাহিনী রাখা যাবে না, গোপন সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কোনো কর্মকাণ্ড চলবে না।
এই সব আইন ব্যবহার করে বারবার নিষিদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল—জামায়াতে ইসলামী, সর্বহারা পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, এমনকি ইসলামী ছাত্রশিবির পর্যন্ত। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম পরিহাস, এবার সেই আওয়ামী লীগকেই নিজের বানানো আইনের মুখোমুখি হতে হলো।
২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর, ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগে ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ১৮১ ধারায় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর সাম্প্রতিক সহিংস আন্দোলন, হত্যা-নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলা পর্যন্ত তাদের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার।
এখন দেশের রাজনীতিতে উঠেছে একটাই প্রশ্ন—যে আইন অন্যকে ঘায়েল করতে বানানো হয়েছিল, আজ সেই আইনেই কি নিজেরাই নিষিদ্ধ হলো আওয়ামী লীগ?