
বাংলাদেশ: হাসিনা সরকার পতনের পর গোপন বন্দীশালা কথিত ‘আয়না ঘর’ থেকে মুক্তি পেয়েছেন ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাশেম আরমান এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল আমান আজমিসহ অনেকেই। কিন্তু নিখোঁজ আরো অনেকের এখনো কোনো সন্ধান মিলছে না। সামাজিক মাধ্যমে নানা পোস্ট এবং প্রকাশিত গোপন নথি দেখে ভেঙে পড়েছে অনেক পরিবার।নিখোঁজ ব্যক্তিরা কারো সন্তান, কারো ভাই ও কারো স্বামী, কারো বাবা। তাদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছে পরিবারগুলো। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব মানুষের সন্ধান বের করার দাবি তুলেছেন গুমের শিকার পরিবারগুলোর স্বজনরা। সরকার পতনের পর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর ডিজিএফআই কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা অফিস, সিটিটিসি কার্যালয়ের ভেতরে বন্দীশালার ঢুকে নিখোঁজ ভাই এবং অন্যদের সন্ধান করেন মায়ের ডাক সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম। গুমের শিকার পরিবারদের সাথে করে ঘুরছেন আদালত থেকে অন্তবর্তী সরকার প্রধান পর্যন্ত গিয়েছেন সানজিদা।
তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সাথে কী ঘটেছে এবং কারা এর সাথে জড়িত সেগুলো খুঁজে বের করার দাবি তারা করেছেন। তিনি জানান, গত পনের বছরে ছয় শতাধিক গুমের ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে অনেকের মৃত্যুর খবর এসেছে, কেউ কেউ ফিরে এসেছে আর এখনো অনেকে নিঁখোজ রয়েছেন। ‘ঢাকার বাইরে যে পরিবারগুলো এরা তো অপেক্ষা করে আছে। সংখ্যাটা দেড় শ’ বা দু’শ’ না। আমার মনে হয় সংখ্যাটা আরো বেশি। আপনি আবার ছাত্র আন্দোলনের পর্যন্ত আসেন যদি আরো অনেক মানুষ গুম। এইটা আসলে মোস্ট প্রায়োরিটি থাকা উচিৎ এই যে উপদেষ্টা পরিষদ এসেছেন তাদের কাছে,’ বলেন সানজিদা। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি কমিশন গঠন করে দ্রুত পরিবারগুলোকে স্বজনদের সন্ধান জানানো দরকার। নূর খান লিটন দীর্ঘদিন ধরে এসব গুমের ঘটনা নিয়ে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পর অনেকে অন্যত্র বিয়ে করেছেন। অনেকে আছেন যে ব্যাংকে টাকা তুলতে পারছেন না। অনেকে আছেন সম্পত্তির ভাগ নিতে পারছেন না। নানান রকম জটিলতা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সুতরাং আমি মনে করি পরিবারকে এখনই স্পষ্টভাবে একটা কমিশন গঠন করে তদন্ত করে কী ঘটেছে, তারা কোথায় আছে বা নেই এই বিষয়গুলি চিহ্নিত করা দরকার।’ গুমের সাথে জড়িতদের বিষয়ে নূর খান বলেন, ‘দুস্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় আনা। কারণ তারা যত বড় অফিসারিই হোক, দুস্কৃতিকারী। তবে আমরা প্রতিশোধ চাই না, আমরা ন্যায্য বিচারটা চাই।’ তিনি বলেন, ‘আগে যে অবস্থা ছিল যে যে কাউকে ধরে মেরে ফেলতো, বন্দি করে ফেলতো। জিজ্ঞাসাবাদের নামে নখ উঠায় দিত এটা করতো ওটা করতো নানা নির্যাতন করতো আমরা চাই না তেমন ঘটনা ঘটুক। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক। কী ঘটেছিল সেই ঘটনাগুলি প্রকাশিত হোক।’ এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রি. জে অব. ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ( এ সাক্ষাৎকার যখন নেয়া হয়েছিল তখন তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ছিলেন। পরে তার দপ্তর বদল হন) বিবিসিকে জানান, সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তিনি বলেন, ‘কে করেছে, কীভাবে করেছে, কখন করেছে এটাতো একটা বড় ধরনের ইনভেস্টিগেশন। আমার মনে হয় পরবর্তী কেবিনেটে নিশ্চয়ই এটা উঠবে। আলাপ করে একটা কমিশন করে সেই কমিশন খুঁজে বের করবে এটা।’ নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি কিছুটা ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সূত্র : বিবিসি













































