রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিশেষ বিবেচনায় কাউকে এ ধরনের অনুমোদন দেওয়া হলে পরবর্তী সময়ে অন্যরাও এমন সুযোগ চাইবে। সে ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ দেওয়া না হলে তাঁরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ ক্ষেত্রে কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে রাজউক কাজ করছে না।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, গুলশানের এ ভবনটির অনুমোদন পেতে ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাজউকে আবেদন করেন আ হ ম মুস্তফা কামালের তিন মেয়ে—কাশমিরী কামাল, কাশফি কামাল ও নাফিসা কামাল। আবেদনে জরিমানা দিয়ে ১৪ তলার ওপর ৬ তলা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এরপর বিষয়টি রাজউকের পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন (বিসি) কমিটিতে তোলা হয়। গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি কমিটির এক সভায় বলা হয়, বিদ্যমান প্লটে তিনটি বেসমেন্টসহ ১৪ তলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাই বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের অনুমোদন পেতে হলে রাজউকের ভূমি শাখার ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, প্রকৌশলী ও স্থপতির লে-আউট নকশা, রাজউকের বৃহদায়তন প্রকল্পের অনুমোদন এবং ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য কাঠামোগত উপযোগিতার বিষয়ে স্থাপত্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে।
রাজউকের এক অথরাইজড অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনুমোদন না নিয়ে ভবন বানানো ইমারত নির্মাণ আইনের ৩ (১) ধারা এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালার ৩ উপবিধির লঙ্ঘন। এ আইন ও বিধি লঙ্ঘন করা হলে ধারা ১২ অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তির সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা অর্থ দণ্ড হতে পারে। সেখানে জরিমানা দিয়ে যদি এ ধরনের স্থাপনার বৈধতা দেওয়া হয়, তাহলে এটি খারাপ নজির হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। লোকজন আগে নিজের ইচ্ছামতো অবৈধ স্থাপনা বানিয়ে পরে অনুমোদনের জন্য আসবে।
গুলশানের ওই ভবনের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘গুলশানের একটি ইস্যুর কথা আমার সুনির্দিষ্টভাবে মনে নেই। তবে অনেকেই আবেদন করতে পারেন। আমরা এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসিনি। অবৈধ ভবনগুলো নিয়ে আগে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। পরে তা নিয়ে নগর পরিকল্পাবিদসহ সব ধরনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে যেটা ভালো হয় সেটাই করা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লোটাস কামাল প্রোপার্টিজ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার সায়দুল আলম বলেন, ‘আমরা প্রথমে ২০ তলা পর্যন্ত অনুমোদনের জন্য নকশা দাখিল করেছিলাম। কিন্তু রাজউক থেকে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতার কথা বলে ১৪ তলার অনুমোদন দেয়। এখানে আমাদের তো কিছু করার নেই। এখন আবার ২০ তলার নকশা দাখিল করা হয়েছে। তা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আর এ বিষয়ে যদি সরকার কোনো নীতিমালা করে, তাহলে তা সবার জন্যই প্রযোজ্য হবে। এখানে আমাদের আলাদা কোনো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।’
রাজউকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ৮ মার্চ রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে একটি ভবনে আগুন ও বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, কেউ যেন অনুমোদন না নিয়ে ভবন নির্মাণ না করে। যারা অনুমতি না নিয়ে ভবন নির্মাণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘রাজধানীতে বিপুলসংখ্যক স্থাপনা হয়েছে অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় করে। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। এ বিষয়ে নগর উন্নয়ন কমিটিতে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন শহরে কত অবৈধ স্থাপনা আছে, তা নিরূপণ করে সেগুলোর প্রকৌশলগত দিক খতিয়ে দেখা হবে। এরপর সবকিছু ঠিক থাকলে মোটা অঙ্কের জরিমানা আদায় সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।’
নগর উন্নয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমরা নগর উন্নয়ন কমিটির একটি সভা করেছি। যেসব ভবন হয়ে গেছে তা তো ভাঙা যাবে না। এসব ভবনের কারিগরি বিষয় দেখে পরে তা একটি নীতিমালার আলোকে অনুমোদন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে গুলশান এলাকায় যারা অবৈধ স্থাপনার বৈধতা চাইবে তাদের বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি জরিমানা গুনতে হবে।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |