প্রচ্ছদ জাতীয় দোষ করেও দায় চাপানোর চেষ্টায় ভারত

দোষ করেও দায় চাপানোর চেষ্টায় ভারত

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে ভারত অন্তরে স্বীকার করে না। এই রাষ্ট্র যাতে টিকে থাকতে না পারে সেজন্য প্রতিনিয়ত তারা ষড়যন্ত্র করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনা এর অন্যতম অংশ বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, পাহাড়ে অশান্ত পরিস্থিতির পেছনে দেশটির প্রত্যক্ষ ইন্ধন রয়েছে এবং এ নিয়ে দিল্লি বরাবরই দায় এড়িয়ে উলটো বাংলাদেশের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে এবং কূটনৈতিকভাবে কঠিন জবাব দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. এম শাহিদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের বক্তব্য কোনোভাবেই কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। তিনি নিছক একজন ‘প্রোপাগান্ডিস্ট’, পার্শ্ববর্তী দেশের প্রতি যার সামান্যতম কূটনৈতিক শ্রদ্ধাবোধ নেই। তারা নিজেদের দোষ স্বীকার না করে বাংলাদেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। উলটো আবার বাংলাদেশের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে। এটা একমাত্র ভারতই করে।

বাংলাদেশের আরও কঠোরভাবে প্রতিবাদ জানানো উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভারতের এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদেরও কঠিন ও পালটা জবাব দেওয়া উচিত। মোদি সরকারের ভয়ংকর নীতি আরএসএসকে ফলো করা, অখণ্ড ভারতের উদ্দেশ্যে আমাদের স্বাধীনতাকে ভ্রুকুটি করা। ‘এই অঞ্চলে একমাত্র তাদেরই অধিকার রয়েছে’-দীর্ঘদিনব্যাপী ভারতের এই উচ্চাভিলাষের কারণেই এ ধরনের হস্তক্ষেপ। আসলে আমাদের সবচেয়ে খারাপ বিষয়টা হলো-গত ১৬ বছরের পদলেহনকারী আচরণ। সেটা থেকে এখনো পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারিনি। বাংলাদেশ পালটা শক্ত প্রতিবাদ করলে এবং সরকার ও গণমাধ্যম পালটা তাদের অপকর্মগুলো এক্সপোজ করলে এগুলো অনেক কমে যেত বলেও মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস স্ট্যাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম জসিম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে দেশের মানুষ এবং ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার সব সময় একটা দুশ্চিন্তায় থাকে-প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলে কিনা।

তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পাহাড়কে অশান্ত করার পেছনে ভারতের যে হস্তক্ষেপের কথা বলেছেন। আমি মনে করি, তিনি অবশ্যই জেনে বুঝে এবং স্থানীয় সরকার ও শান্তিরক্ষায় সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর তথ্যের ভিত্তিতেই বলেছেন। কারণ একটা বিষয় হচ্ছে ওখানে যে ভয়ংকর অস্ত্রগুলো পাওয়া যাচ্ছে, এই অস্ত্রগুলো কোথা থেকে আসছে? এটা একটা বড় প্রশ্ন।

ড. এম জসিম বলেন, ভারতের উচিত বিষয়টিকে খতিয়ে দেখা। যদি ভারত আগ্রহী না হয় তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে তৃতীয় কোনো পক্ষ এখানে নিরপেক্ষ তদন্ত করলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে যে আসলে তাদের ইন্ধন রয়েছে।

রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুল হক যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে ভারত প্রকাশ্যে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু তাদের অভ্যন্তরীণ নীতি হলো তারা কখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে না। এই রাষ্ট্র যাতে টিকে থাকতে না পারে সেজন্য প্রতিনিয়ত তারা ষড়যন্ত্র করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সেই ষড়যন্ত্রের একটা অন্যতম অংশ। তিনি বলেন, আজ থেকে নয়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যথার্থই বলেছেন। কেননা ইউপিডিএফের কাছ থেকে ভারতের অস্ত্র পাওয়া গেছে। ফলে ভারত সরাসরি জড়িত। আমি মনে করি আমাদের সরকার আরও শক্তিশালীভাবে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা উচিত।

সূত্র: যুগান্তর