অর্থনীতি: প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তার জন্য ২০১১ সালে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. মজিবর রহমান। তিনি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এ ব্যাংকটির দায়িত্ব নেন। এর আগে তিনি সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ডিএমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ২৩ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে তিনি তার দক্ষতার ছাপ রেখে গেছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে। তার যোগদানের এক বছরে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সার্বিক সূচকে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে চ্যানেল 24 অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান।
প্রশ্ন : যোগদানের পর গ্রাহকের জন্য নতুন কী কী সেবা যুক্ত করেছেন? সেগুলো বাস্তবায়নে কী ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন?
মজিবর রহমান : ব্যাংকে যোগদান করে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমি ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর যোগদান করি। ২০২২ সালের জুনে খেলাপি ঋণ ছিল ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এসে খেলাপি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। এর আগে ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ হাজার, এখন তা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজারের ওপরে। বর্তমানে গ্রাহক ১ লাখ ৫০ হাজারের ওপর। গত দশ বছরে ঋণের স্থিতি ছিল মাত্র পাঁচশ ১৫ কোটি টাকা। আমার এই দুই বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার দুইশ ২৭ কোটি টাকা। এই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মনির ছিলেন পর্ষদ চেয়ারম্যান। এই কৃতিত্বের পেছনে যাদের অবদান রয়েছে তারা হলেন, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। তফসিলি ব্যাংক কার্যক্রম আগামী মাসেই চালু করা হবে। তাছাড়া আমি এসে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চালু করেছি। এছাড়া প্রবাসীদের রেমিট্যান্স সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে আনার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই সরাসরি রেমিট্যান্স আনা সম্ভব হবে। সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। সেখানে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সব গ্রাহক সোনালী ব্যাংকে সব শাখা থেকে ঋণের কিস্তি নিতে পারবে।
প্রশ্ন : প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে আগে বিশৃঙ্খলা ছিল। শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে আপনি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
মজিবর রহমান : প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে আগে কিছুটা বিশৃঙ্খলা ছিল। বর্তমানে সবই সমন্বয় করা হয়েছে। কাজ করার ভালো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীদের নির্ধারিত পোশাকের ব্যবস্থা করেছি। গত ১১ বছরে ব্যাংকের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট হয়নি। ব্যাংকারদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ট্রেনিং সেন্টার চালু করেছি। বাহির থেকে দক্ষ প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ডিজিটাল হাজিরা চালু করেছি। এছাড়া ব্যাংকে কোনো নিরাপত্তা কর্মী ও অফিস সহকারী ছিল না। আমি ১৭৬ জন নিরাপত্তাকর্মী ও ৯৯ জন অফিস সহকারীকে নিয়োগ দিয়েছি। দক্ষ জনবলের লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নিয়োগের জন্য জানিয়ে রেখেছি। অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।
প্রশ্ন : ঋণ পেতে গ্রাহককে কী কোনো জামানত দিতে হয়?
মজিবর রহমান : প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে কোনো জামানত লাগে না। এ ব্যাংকে ঋণ পেতে কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হয় না। পাসপোর্ট, ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ঠিক থাকলে আবেদনের সাত দিনের মধ্যেই ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন দিন বা আরো কম সময়ের মধ্যেও ঋণ পেয়ে থাকে গ্রাহকরা। সর্বোচ্চ দুই লাখ বা তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশিও দেয়া হয়। কেউ চাইলে ১ লাখ বা ৫০ হাজার টাকাও ঋণ নিতে পারেন। ঋণের মেয়াদ ২ বছর। এর সুদের হার ৯ শতাংশ। তবে এর ঊর্ধ্বে হলে দেড়গুণ সমপরিমাণসহ জামানত জমা দিতে হবে। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়- কেউ যদি ঋণ নিয়ে কোনো কিস্তি পরিশোধ না করেই কোনো দুর্ঘটনা বা কোনো কারণে মৃত্যুবরণ করেন, তাকে সম্পূর্ণ ঋণ মওকুফ করে দেয়া হয়। এটি আমাদের ব্যাংকের বিশেষ সৌন্দর্য। আর কোনো ব্যাংকে এমন সুযোগ সুবিধা নেই।
প্রশ্ন : অভিবাসন ঋণ ছাড়া আর কোন খাতে ঋণ দেয়া হয়?
মজিবর রহমান : মাত্র ৯ শতাংশ সুদহারে বিদেশ গমনেচ্ছু শ্রমিকরা প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছেন। এ জন্য অভিবাসী কর্মীদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ঋণ সেবা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অভিবাসন ঋণ, পুনর্বাসন ঋণ ও বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ। অবশ্য সঞ্চয় প্রকল্প, মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প ও দ্বিগুণ আমানত প্রকল্প চালু রয়েছে এ ব্যাংকে।
প্রশ্ন : ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা কত, এরমধ্যে খেলাপি কত?
মজিবর রহমান : বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি। এর বিপরীতে ঋণের পরিমাণ রয়েছে সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা। আমি যোগদানের আগে ২০২২ সালের জুনে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৫৩৭ জন। এর বিপরীতে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৮৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। গত এক বছরে সব খেলাপি ঋণ আদায়ে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে মাত্র ১৫০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের পরিমাণ।
প্রশ্ন : কোন দেশে যাওয়ার জন্য বেশি ঋণের আবেদন বেশি পান?
মজিবর রহমান : সৌদি আরব ঋণের আবেদন বেশি পাওয়া যায়। সৌদি আরবের পরে দুবাই। এছাড়া কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন এসব দেশে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরাই বেশি আবেদন করেন। সম্প্রতি ইতালি, রোমানিয়া, জর্ডান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রেও ঋণের আবেদন বাড়ছে।
প্রশ্ন : ঋণ পেতে কী কী কাগজপত্র লাগে ?
মজিবর রহমান : বিদেশ যাওয়ার জন্য ঋণ পেতে চাইলে বৈধ ভিসা থাকা হচ্ছে অন্যতম শর্ত। ভিসা সংগ্রহ করতে হয় নিজেকে, অর্থাৎ ব্যাংক কোনো ভিসা পাইয়ে দেবে না। ঋণের জন্য আবেদন করতে কোনো টাকা লাগে না। আবেদন করতে হয় ব্যাংকের নির্ধারিত ফরমে। বৈধ ভিসার পাশাপাশি বিদেশগামী কর্মীকে যে কোম্পানি কাজ দেবে বা নিয়োগ করবে, সেই কোম্পানির দেয়া নিয়োগপত্র লাগবে। সেই সঙ্গে আবেদনকারীর সত্যায়িত ৫ কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি, বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা সংবলিত পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেয়া সনদ, পাসপোর্ট ও ভিসার কপি, ম্যান পাওয়ার স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি দাখিল করতে হয়।
প্রশ্ন : আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মজিবর রহমান : প্রবাসীদের পাশাপাশি এসএমই ও কৃষি খাতে ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা আছে। প্রবাসী কল্যাণ নামে একটি অ্যাপ চালু করব। যাতে প্রবাসীরা বিদেশে বসে সব লেনদেন করতে পারে। বর্তমানে এর ১২০টি শাখা রয়েছে। আরও শাখা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আমরা উপ-শাখায় জোর দিচ্ছি।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |