অপরাধ: দীপু মনির টাকার মেশিন হিসেবে খ্যাত চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম খান ওরফে বালু সেলিমের গনপিটুনিতে মৃত্যু নিয়ে রহস্যের জাল ক্রমাম্বয়ে বিস্তার করছে। এলাকায় চাউর রয়েছে- কৌশলে উত্তেজিত লোকজনকে উসকে দিয়ে দুর্নীতির পার্টনার বালু সেলিমকে হত্যা করা হয়েছে, যাতে দীপু মনি বা তার ভাইয়ের অবৈধ টাকার সাক্ষী না থাকে। সেই সাথে চাঁদপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে নামে-বেনামে থাকা সেলিমের অঢেল সম্পদও আত্মসাত করা যায়। অভিযোগ রয়েছে বালু সেলিমের মাধ্যমে চাঁদপুরে বালুমহাল থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন দীপু মনি ও তার ভাই।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ৫ আগস্ট রাতে বালু সেলিম ও তার ছেলে শান্ত খান এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার গণপিটুনিতে মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি থেকে মাত্র ২/৩ কিলোমিটার দূরে উত্তেজিত লোকজনের হামলার শিকার হন। গ্রামের ছিঁচকে চোর থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক সেলিম খানের উত্থান ঘটে তৎকালীন পররাষ্ট্র দীপু মনির হাত ধরে। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবরের চাইতে এখন সেলিমের মৃত্যুর খবর যেনো আনাচে-কানাচে বেশি চলমান। সেলিম খানের নির্মম মৃত্যুর জন্য সাধারণ মানুষ দায়ী করছেন তার দুর্নীতির পার্টনারদের।
আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার চার মেয়াদের মধ্যে পররাষ্ট্র, শিক্ষা ও সমাজকল্যান এ তিন মেয়াদে মন্ত্রী, সেই সাথে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন দীপু মনি। এসব পদ-পদবির কারনে গত প্রায় ১৬ বছর তিনি ছিলেন বেপরোয়া। তার হাত থেকে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও রেহাই পাননি। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ ছিল অনেকটা সংখ্যালঘুর মতো। আর ভিন্ন মতাদর্শের লোকজন ছিল মামলার-হামলার ভয়ে সারাক্ষন তটস্থ।
দীপু মনির দুর্নীতি ও অপকর্মের মূল সহযোগী ছিলেন তার ভাই জেআর ওয়াদুদ টিপু। টিপুর নেতৃত্বে প্রথমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়। এ চক্রে চাঁদপুর পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারও ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে দীপু মনি রিমান্ডে থাকলেও তার ভাই টিপু ও রতন কুমার এখন পলাতক।
চাঁদপুর পদ্মা ও মেঘনার ডুবোচর থেকে ফ্রি-স্টাইলে বালু উত্তোলনেও ছিল দীপু মনির লুলুপ দৃষ্টি। তার ঘনিষ্ঠ লোক হিসাবে পরিচিত লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সেলিম খানকে সেই বালু তুলতে উৎসাহী করেন তিনি। সেলিম খানের পক্ষে বালি উত্তোলনের জন্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কয়েক বছরে ১৫টি ডিউ লেটার দেন দীপু মনি। বিনিময়ে তার ভাই টিপুু সেলিম খান থেকে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের সুবিধা নিতেন।
মেঘনা নদী থেকে সেলিম খানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু তোলার প্রতিবাদ যারাই করেছেন তারাই দীপু মনির রোষানলে পড়েছেন। চাঁদপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দীপু মনির বিরোধ ও দূরত্ব বাড়ে শুধু বালু উত্তোলন নিয়ে প্রতিবাদ করায়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দীন আহমেদকে কোণঠাসা করতে তার বিরুদ্ধে বালুখেকো সেলিম খানের লোকজন দিয়ে শহরে মিছিল করানো হয়।
নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বালু তোলার সমালোচনা করে পদ হারান। ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবসের আলোচনায় তিনি বলেন, মেঘনায় অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছেন, তাদের সঙ্গে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে। এর দুদিন পরই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম খান ওরফে বালু সেলিমের চাঁদপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে রয়েছে নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ। গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)তার সম্পত্তি ক্রোক করে রিসিভার নিয়োগ করেন। তবে সেলিম খানের মালিকাধীন চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকাসহ বেনামে থাকা অনেক সম্পদ দখলের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার গণঅভুথ্যান পরিবর্তিত পরিস্থিতে কেউ কেউ এ সুযোগ নেয়ার চেস্টা করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
সূত্র : Daily Inqilab
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |