
দুই সন্তানের বাবা জাফর হোসেনের স্বপ্ন ছিল ইউরোপে গিয়ে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করবেন। একটি এনজিও থেকে ৪ লাখ টাকা ও সুদের ওপর ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এবং স্বর্ণের গহনা বন্ধক রেখে মোট ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে দেশ ছাড়েন তিনি। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। জাফর হোসেনকে দালাল চক্র বিক্রি করে দিয়েছে রাশিয়ার কাছে। তাকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
জাফর হোসেন যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের বড় মেঘলা গ্রামের খায়রুল সরদারের ছেলে। জাফরের মায়ের নাম হাসিনা খাতুন। স্ত্রী খাদিজা খাতুন এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বাড়িতেই থাকেন।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় মানবপাচারের একটি বড় ধরনের ফাঁদ পেতেছে ড্রিম হোম ট্রাভেলস নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। গ্রাম থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্তরে তাদের একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে এই চক্রের সদস্যরা কাজ করছেন।
জাফরের পরিবার জানান, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর থেকে শুরু হয় দালালচক্রের অত্যাচার। যুদ্ধে প্রশিক্ষণে যেতে না চাইলে দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। মারধর করা হয়, দেওয়া হয় না খাবার।
জাফরের মা হাসিনা খাতুন বলেন, চার মাস আগে এনজিও থেকে ৪ লাখ ও সুদের ওপর ৩ লাখ ঋণ নিয়ে এবং স্বর্ণের গহনা বন্ধক রেখে মোট ৮ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে রাশিয়া পাঠানো হয়। দালালের প্রতারণার ফাঁদে পরে সৌদিতে একমাস থাকতে হয়। এরপর দুবাই থেকে নতুন দালাল তাকে লিবিয়া নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাশিয়ায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে যুদ্ধের ময়দানে নামতে হবে বলে ছেলে জানিয়েছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এখন ছেলে কান্নাকাটি করছে। সে জানিয়েছে, যুদ্ধ করতে গিয়ে বাংলাদেশি একজন মারা গেছে, আরেকজন গুরুতর আহত হয়েছে। আমার ছেলে এখন বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইছে। না হলে তার মৃত্যু হবে বলে জানিয়েছে। সরকারের কাছে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন এই মা।
জাফরের স্ত্রী খাদিজা খাতুন বলেন, সাইপ্রাস যাওয়ার উদ্দেশে ড্রিম হোম ট্রাভেলসে টাকা জমা দিয়েছিলেন জাফর। কিন্তু বিভিন্ন ছলচাতুরী করে তাকে রাশিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে কাজ দেওয়ার কথা বলে এজেন্সিটি। কিন্তু তাকে এখন যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। যুদ্ধ না করলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
জাফরের প্রতিবেশী তামিম হাসান বলেন, জাফর ছেলে হিসেবে নম্র ভদ্র। সে বাড়িতে থাকতে জমিতে আর নিজের বাবার চায়ের দোকানে কাজ করতো। বিদেশ যাওয়ার লোভে নিজের অজান্তেই দালাল চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে ফেঁসে গেছেন জাফর। এখন তার পুরো পরিবার পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাফর যে মাধ্যমে বিদেশে গিয়েছে আগে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |