সারাদেশ: এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার আগে কলকাতার সেই ফ্ল্যাটে ক্লোরোফর্ম (চেতনানাশক) দিয়ে অচেতন করা হয়। এরপর হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী শিলাস্তি রহমান ওরফে সেলেনিস্কির সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে রাখে খুনিরা। সেই ছবি ছড়িয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল খুনিচক্রের। তবে এর আগেই মূল কিলার আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ধরা পড়ে যাওয়ায় এসব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য মিলেছে। অবশ্য সবকিছুই বেমালুম অস্বীকার করছেন শিলাস্তি নামের সেই তরুণী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকার তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করেন তিনি। গতকাল শুক্রবার আদালতেও দাবি তুললেন, ‘আমি কিছুই জানি না।’ তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এমপি আনার হত্যার সময় কলকাতার সেই ফ্ল্যাটে ছিলেন শিলাস্তি রহমান।
হত্যা মিশন সফল হওয়ার পর ঢাকায় ফিরে শাহীনের ফ্ল্যাটে ফুর্তি পার্টিতেও অংশ নেন তিনি। ডিবি সূত্র জানায়, ২২ বছর বয়সী এই শিলাস্তি মডেল হতে চেয়েছিলেন। কয়েক বছর আগে এক ক্লাব পার্টিতে শাহীনের নজর কাড়েন তিনি। এরপর তার বান্ধবী হয়ে যান। পুরান ঢাকার বাসা ছেড়ে ওঠেন উত্তরার মতো অভিজাত এলাকায়। আমেরিকা থেকে শাহীন দেশে এলে ঘুরে বেড়াতেন তার সঙ্গে। বন্ধুর হাত ধরে চলে যেতেন বিদেশেও। সবশেষ এমপি আনারকে হত্যার চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে অংশ নিতে গত ৩০ এপ্রিল শাহীনের কলকাতা গমনেও সঙ্গে ছিলেন তার এই বান্ধবী। ১৩ মে এমপি খুন হওয়ার পর শিলাস্তি দেশে ফেরেন ১৫ মে।
এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের যে মামলা করেছেন, তাতে শিলাস্তি রহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ডিবি পুলিশ। গতকাল আদালতে হাজির করে অন্য দুই আসামির সঙ্গে তারও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত তাদের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল পুলিশ অন্য দুই আসামির সঙ্গে শিলাস্তিকে আদালতে হাজির করে। কাঠগড়ায় কাঁদতে দেখা যায় শিলাস্তিকে। শুনানির সময় বলতে থাকেন, এসব ঘটনার কিছুই তিনি জানেন না। শুনানির এক পর্যায়ে এক আইনজীবী ওকালতনামায় তার সই নিতে গেলে তিনি বলেন, ‘আমি কেন সই করব? আমি আসামি নাকি?
তদন্ত সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, ১৩ মে কলকাতায় এমপি আনারকে খুন করার পর ১৫ মে ঢাকায় চলে আসেন প্রধান কিলার এক সময়কার চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরেন শিলাস্তি রহমান। বিমানবন্দর থেকে চলে যান শাহীনের অভিজাত ফ্ল্যাটে। সূত্র বলছে, এমপি আনার খুনের সময়ে শিলাস্তি কলকাতার নিউ টাউনে সঞ্জীবনী গার্ডেনে শাহীনের ভাড়া করা ট্রিপ্ল্যাক্স ফ্ল্যাটে অবস্থান করছিলেন। ভবনে প্রবেশ করে তিনি অবস্থান নেন ফ্ল্যাটের তৃতীয় তলায়। পরে তাকে নিচে নামিয়ে আনা হয়। ততক্ষণে নিচতলায় আনারকে অচেতন করে ফেলে খুনি চক্র। এরপর শিলাস্তির সঙ্গে আনারের আপত্তিকর ছবি তোলা হয়। ফের তিনি ফ্ল্যাটের ওপরের তলায় চলে যান। ব্লিচিং পাউডারের গন্ধ পেয়ে নিচে নেমে আসেন। খুনের বিষয়টি বুঝতে পেরে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে কলকাতা বিমানবন্দর এলাকার একটি হোটেলে অবস্থান করেন। সেখান থেকে প্রধান কিলার আমানুল্লাহর সঙ্গে দেশে ফেরেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিলাস্তির গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। তবে তিনি বড় হয়েছেন পুরান ঢাকায়। অবশ্য এখন থাকেন উত্তরা এলাকায়। তিনি ধনাঢ্য পরিবারের কেউ না হলেও তার চলনে-বলনে আভিজাত্য থাকে সবসময়।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |