প্রচ্ছদ রাজনীতি তৃণমূলের ক্ষোভে বেকায়দায় বিএনপি: ৩০ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা

তৃণমূলের ক্ষোভে বেকায়দায় বিএনপি: ৩০ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা

২৩৭ আসনে ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বিএনপির তৃণমূলে অসন্তোষ বাড়ছে। বিভিন্ন আসনে বিতর্কিত, অযোগ্য, বয়সজনিত সমস্যায় ভোগা, সংস্কারপন্থি ও ‘হাইব্রিড’ নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে মাদারীপুর-১ আসনে বিতর্কিত কামাল জামাল মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে দল। অর্ধশতাধিক আসনে চলছে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, যেখানে প্রার্থী নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, সেইসব আসনে পরিবর্তন আসতে পারে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০টি আসনে মনোনয়ন বদলের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত ২৩৬ জনের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, তারা চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন। তবে বিতর্কিতদের বিষয়ে চলছে নতুন করে যাচাই–বাছাই। নিরপেক্ষ একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মাঠের পরিস্থিতি যাচাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একজন উপদেষ্টাও এই কাজে যুক্ত আছেন।

মনোনয়ন ঘোষণার সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরিষ্কারভাবে বলেন, এটি প্রাথমিক তালিকা, প্রয়োজনে পরিবর্তন হতে পারে। স্থায়ী কমিটির শীর্ষ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও স্বীকার করেন, মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ স্বাভাবিক; তবে যোগ্য ও জয়ের সম্ভাবনাময় প্রার্থীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার দুই আসনে পরিবর্তনের সম্ভাবনা

ঢাকা-৫ আসনে নবী উল্লাহ নবীর বয়স ও বিতর্ক দলকে ভাবাচ্ছে। ফলে এখানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বা যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে প্রার্থী করা হতে পারে।

ঢাকা-১২ আসনে সাইফুল আলম নীরবকে নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে; জোটশরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল হককে আসন ছাড়ার আলোচনাও চলছে।

সংস্কারপন্থি, সুবিধাভোগী ও বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

সুনামগঞ্জ-১ আসনে আনিসুল হকের মনোনয়ন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় তার সংস্কারপন্থি ভূমিকা, আওয়ামী ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ ও পরিবেশ আইনের মামলা নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ বাড়ছে।

চাঁদপুর-৪ আসনে বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের আজীবন সদস্য লায়ন হারুনুর রশিদের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে লিখিত আবেদন জমা পড়েছে।

নবীন-প্রবীণের লড়াই তীব্র হচ্ছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে ৯০ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থী মুশফিকুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিস্তর ক্ষোভ। দীর্ঘদিন দেশে না থাকা, নির্বাচনে অপসারণের অভিযোগ এবং বয়সজনিত অক্ষমতা নিয়ে নেতাদের আপত্তি রয়েছে।

মাগুরা-২ আসনে নিতাই রায় চৌধুরীর মনোনয়নেও তীব্র বিভক্তি। সাবেক এমপি কাজী কামালের সমর্থকরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করছেন।

নেত্রকোনা-৫ আসনে প্রার্থী আবু তাহের তালুকদারকে নিয়ে নৈতিক চরিত্রের অধঃপতনসহ একাধিক অভিযোগে তৃণমূল বিক্ষুব্ধ।

বিভিন্ন জেলায় বাড়ছে দ্বন্দ্ব

সিরাজগঞ্জ-৩, নেত্রকোনা-৩, চাঁদপুর-২সহ বহু আসনে মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম, ফেনী, গাইবান্ধা, নরসিংদী, সাতক্ষীরা, নাটোর, জামালপুর, নীলফামারী, কুষ্টিয়া, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা, মৌলভীবাজারসহ দেশের বহু আসনে নেতা–কর্মীরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করছেন।

দলের ভেতরে আলোচনা রয়েছে—এগুলোর কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারে হাইকমান্ড।

দলীয় সিদ্ধান্ত হলো, জয়ের সম্ভাবনা, গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি—এই তিন মানদণ্ডেই চূড়ান্ত মনোনয়ন ঠিক করা হবে।