
প্রায় তিন দশক ধরে খুলনা মহানগর বিএনপি আর নজরুল ইসলাম মঞ্জু যেন এক নামেই মিশে ছিল। এই সম্পর্কের ছন্দপতন ঘটে ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনের জবাবে মঞ্জুকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় বিএনপি। পরের তিন বছর সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নানা চেষ্টা চালিয়েছেন। দলের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে দিস্তার পর দিস্তা চিঠি লিখেছেন। পদ-পদবী ছাড়াই যোগ দিয়েছেন দলীয় কর্মসূচিতে। বড় বড় শোডাউন করে দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা করেছেন। প্রতীক্ষায় ছিলেন একটি ফোন আসবে।
দীর্ঘ তিন বছর রোববার বিকেল সোয়া ৫টায় লন্ডন থেকে আসলো কাঙ্খিত সেই ফোন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঞ্জুকে জানালেন, খুলনা-২ আসনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে কাজ শুরু করতে হবে। তার আগে পক্ষ-বিপক্ষে থাকা সব নেতাকর্মীকে এক কাতারে নিয়ে আসতে হবে। এরপর থেকে অভিনন্দনের বন্যায় ভাসছেন মঞ্জু। নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং বিএনপির শীর্ষস্থানীয় দু’জন কেন্দ্রীয় নেতা ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বর্তমানে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। ২৭ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অন্য প্রার্থীদের মতো তিনিও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। ওই রাতেই খুলনায় ফেরেন তিনি। পরদিন থেকেই জ্বর ও শরীর ব্যথায় আক্রান্ত হন।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু সমকালকে বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কাজ শুরুর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা দিয়েছেন।’ এরপর ফেসবুকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কয়েকটি বার্তা প্রকাশ করেন তিনি।
খুলনা বিএনপির নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ১৯৮৭ সালে তিনি খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত হন। ১৯৯২ সালের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হয়ে দায়িত্ব পালন করেন একটানা ১৭ বছর। ২০০৯ সালের ২৫ নভম্বর সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক যুগ মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ঘটে ছন্দপতন। ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি থেকে বাদ পড়েন মঞ্জু ও তাঁর অনুসারীরা। ১২ ডিসেম্বর দলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর শোকজ করা হয় তাঁকে। পরে ২৫ ডিসেম্বর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
নজরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রায় ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনের এমন পরিণতি মানতে পারেননি দলটির নেতাকর্মীদের অনেকেই। এক দিন পরই শুরু হয় গণপদত্যাগ। ওই সময় খুলনা মহানগর বিএনপি, পাঁচ থানা ও ওয়ার্ড কমিটি থেকে পাঁচ শতাধিক নেতা পদত্যাগ করেন। এরপর ৩ বছর ধরে বিএনপির সব ধরনের পদ-পদবীর বাইরে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও তাঁর অনুসারীরা।
বর্তমান মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিতে তাদের কারও জায়গা হয়নি। ওয়ার্ডের নতুন কমিটি থেকেও বাদ পড়েছেন তারা। তারপরও কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি ও বড় সমাবেশে তিনি কর্মীদের নিয়ে নিয়মিত অংশ নেন। জুলাই অভ্যুত্থানেও তিনি রাজপথে সরব ছিলেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ বলেন, ‘পদ ছিল না, কিন্তু নজরুল ইসলাম মঞ্জু রাজপথেই ছিলেন। দলের কর্মসূচিতে গিয়ে তার গাড়িতে হামলা হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে। তারপরও তিনি মাঠ ছাড়েননি। তারেক রহমানের ফোনের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো রাজপথ কখনও বেঈমানী করে না।’
তবে খুলনা মহানগর বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন বলেন, ‘ফোনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। প্রার্থিতার বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’
সূত্র : সমকাল













































