
উত্তর-পূর্ব দিল্লির নিউ সীলমপুরের ১৭ বছর বয়সি তরুণ কুণাল খুনে স্থানীয় ‘লেডি ডন’ জিকরাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জিকরা ওই এলাকারই বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার রাতে ১৭ বছর বয়সি ওই তরুণকে ছুরি মেরে খুন করা হয়।
কুণালের পরিবারের অভিযোগ, জিকরা এই খুনের ঘটনায় জড়িত। কারণ ঘটনার সময় সে ওখানে ছিল। কুণালের মা পরভীন সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, জিকরা হাতে পিস্তল নিয়ে গোটা এলাকা চষে বেড়ায়। তার ভয়ে মানুষ ঘর ছেড়ে বেরতে পারে না। জিকরার এক দূর সম্পর্কের ভাইয়ের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু কুণাল সেই ঝামেলায় ছিল না বলে মায়ের দাবি। তা সত্ত্বেও কুণালকে কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে সে।
কে এই ‘লেডি ডন’?
জিকরা নিজেকে ইনস্টাগ্রামে ‘লেডি ডন’ বলে পরিচয় দেন। এক সময় তিনি এক গ্যাংস্টারের স্ত্রীর হয়ে কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি ১০-১৫ জন যুবকের একটি দল পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ।
তিনি প্রায়শই হাতে দেশি বন্দুক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করতেন। সম্প্রতি হোলি উৎসবের সময়ও তার বন্দুক হাতে নাচার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এসব ভিডিওর কারণে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয় এবং তিনি কিছুদিনের জন্য জেলেও ছিলেন। ইনস্টাগ্রামে তার ফলোয়ারের সংখ্যা ১৫,০০০-র বেশি।
তাকে প্রায়ই সিলামপুর এলাকায় পিস্তল হাতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত। এমনকি হোলি উৎসবে তিনি অস্ত্র উঁচিয়ে নাচের ভিডিও আপলোড করেছিলেন। সেই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের হয়।
গ্যাংস্টার হাশিম বাবার সঙ্গে সম্পর্ক:
‘লেডি ডন’ খ্যাত জিকরার নাম ভারতের কুখ্যাত অপরাধী হাশিম বাবার সঙ্গেও সম্পর্কের গুঞ্জনে জড়িয়েছে। হাশিম বর্তমানে জেলে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দক্ষিণ দিল্লির অভিজাত এলাকা গ্রেটার কৈলাশে জিম মালিক নাদির শাহ হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক বড় মামলা রয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া পরিচিতি
ইনস্টাগ্রামে জিকরার ফলোয়ার সংখ্যা ১৫,৩০০-এর বেশি। তার হ্যান্ডেল- @sher_di_sherni_00, এবং বায়োতে লেখা- ‘lady don’। বেশ কিছু পোস্টে তাকে রাস্তায় নাচতে দেখা যায়।
জেল যাত্রা
এক ভিডিও পোস্টে দেখা গেছে—পুলিশ যখন তাকে অস্ত্র আইনে গ্রেফতার করছিল, তখনও তিনি ক্যামেরার দিকে হাসিমুখে হাত নাড়ছিলেন। ওই মামলায় তিনি সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পান। আর ভিডিওটিও পরে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
নিজস্ব গ্যাং পরিচালনা
এক সময় তিনি এক গ্যাংস্টারের স্ত্রীর হয়ে কাজ করতেন। বর্তমানে জিকরার নিজস্ব একটি গ্যাং রয়েছে। যেখানে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
হত্যাকাণ্ডের হুমকি
নিহত কুনালের বাবা জানান, জিকরা বহুবার তার ছেলেকে হুমকি দিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘সে বলত, সুযোগ পেলে আমার ছেলেকে মেরে ফেলবে। ওর হাতে সবসময় পিস্তল থাকত, জেলে গিয়েছিল, এখন আবার বের হয়েছে’।
এসব ঘটনা ঘিরে দিল্লি পুলিশের তদন্ত চলছে এবং সামাজিক মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতার এই নতুন মাত্রা নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে।
উত্তর-পূর্ব দিল্লির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সন্দীপ লাম্বা জানান, ‘আমরা একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছি। অপরাধীরা খুব শিগগির ধরা পড়বে। তদন্ত চলছে’।
এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে দিল্লিতে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন, সামাজিক মাধ্যমের অপরাধপ্রবণতার দৌরাত্ম্য এবং রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি বক্তব্য সব মিলিয়ে শহরের রাজনীতি ও সমাজজীবনে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে।
সূত্র: এনডিটিভি
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |