ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে আটক তোফাজ্জল (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত তোফাজ্জল প্রেম সংক্রান্ত ব্যাপারে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলো। এ অবস্থায় কিছুদিনের মধ্যেই তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই মারা যান। যার কারণে পরিবার ও অভিভাবকহীন হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতো তোফাজ্জল।
নিহত তোফাজ্জল এর ভাই (মৃত নাসির, সাবেক পুলিশ ছিলেন। তার সহকর্মী (পুলিশ) বন্ধু সম্প্রতি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুক একাউন্টে একটি হৃদয়বিদারক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা নিয়ে সর্বমহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সেই পোস্টটি পাঠকদের সামনে হুবহু তুলে ধরা হল-
প্রিয় নাসির,
আশা করি বাবা মাকে নিয়ে পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে ভালো আছো। জীবনের ভাল মন্দ সবকিছুই শেয়ার করতি। এই যেমন তোর বিয়ে করা, বাচ্চা হওয়া থেকে শুরু করে তোর বাবার রোড এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার কথা, তোর মায়ের অসুস্থতা এবং তার মারা যাওয়ার কথা। তোর ভাই তোফাজ্জলকে তোর সাথে পিরোজপুর এনে তোর সাথে রাখা।তার মটরসাইকেলে করে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার কথা।
একটি মেয়ের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক এবং তাকে না পেয়ে তার কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠার কথা। একপর্যায়ে তাকে সংশোধন এবং সুস্থ করে তোলার জন্য কত চেষ্টা, কত পরিশ্রম, কত অর্থব্যয় করেছিস। কিন্তু ভাইকে সুস্থ করার চেষ্টা, টেনশন আর নিজের পেশার প্রচন্ড চাপে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়লি। ধরা পড়লো লিভার ক্যান্সার। পরিবার সহ সহকর্মীরা মিলে শত চেষ্টা করেও তোকে বাঁচাতে পারলাম না। চলে গেলি আমাদের ছেড়ে পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে। কিন্তু সুস্থ্য করে রেখে যেতে পারলিনা তোর প্রিয় ছোট ভাই তোফাজ্জলকে। কতই না চিন্তা করেছিস তাকে নিয়ে। আর তাই এই পৃথিবী হয়তো মনে করে একটা অসুস্থ ছেলে যার বাবা, মা, বড় ভাই কেউই নাই তার আর এই পৃথিবীতে থেকে কি লাভ। তাই তাকেও তোদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। সবাই যাতে একসাথে থাকতে পারো। তুই জেনে খুশি হবি যে,তোদের কাছে পাঠানোর আগে তোফাজ্জলকে কিন্তু পেট ভরে ভাত খাওয়ানো হয়েছিল ভাল থাকিস মা,বাবা এবং ছোট ভাই তোফাজ্জলকে নিয়ে আর পারলে ক্ষমা করিস আমাদের।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের গণপিটুনিতে নিহত মাসুদ কামাল তোফাজ্জলের জানাজা শেষে বরগুনার পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মা-বাবা আর ভাইয়ের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় স্থানীয় মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শোকে কাতর এলাকাবাসী এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। স্থানীয়রা বলেন, তোফাজ্জল খুবই হাস্যরসিক লোক ছিল। তাকে আমরা কখনই কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও সবার সঙ্গেই হাসিমুখে কথা বলতেন তিনি। আমরা এই মৃত্যুকে কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ একটা বিদ্যাপীঠে এমন নৃশংস একটা ঘটনা ঘটবে ভাবতেও পারিনি। সামান্য কয়েক টাকার মোবাইলের জন্য একটা জীবনকে এভাবে চলে যেতে হবে তা মানা যায় না। জানাজায় অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, রাতে ঘুমাতে পারিনি, শুধু চোখের সামনে ভাত খাবার দৃশ্য ভেসে উঠে। তোফাজ্জল আমার কোনো নিকট আত্মীয় নয় তবুও ওর জন্য মায়া লাগে। এ রকম একটা কাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে তা ভাবা যায় না। তোফাজ্জলের স্কুলশিক্ষক মিলন মিয়া জানান, স্কুল জীবন থেকেই তোফাজ্জল খুব মেধাবী এবং শান্ত স্বভাবের ছিল। ও সবসময় শিক্ষক এবং বড়দের সম্মান করত। আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই এবং তার সঙ্গে যারা তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন করেছেন তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এ বিষয়ে তার মামাতো বোন তানিয়া জানান, আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। তারা পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করে দোষ এড়ানোর জন্য মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করলে মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |